দুই দফা দাবিতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিসি চত্বরে’ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন—এ দুই দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে (ভিসি চত্বরে) এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আজ শনিবার বিকেলে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আন্দোলনের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অমর একুশে হলের ছাত্র হৃদয় আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অনতিবিলম্বে ডাকসুর নির্বাচন দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আমাদের এ দুই দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল (রোববার) বেলা দুইটায় ভিসি চত্বরে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না করা হলে, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রতিষ্ঠান নয়, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম; কিন্তু শিক্ষার্থীদের এ স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই প্ল্যাটফর্মকে দলীয়করণের চেষ্টা চালাচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে এই দেশ থেকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা উৎখাত করেছেন। এর শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে, এখানকার শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন।
দেশে একটি সরকার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে একটি সিস্টেমের মাধ্যমে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি অন্যতম। এই সিস্টেমের পুঁজি করা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন দলীয় ছাত্রসংগঠন যে সিস্টেম চালু করে রেখেছে, সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
ক্যাম্পাসকে দলীয় রাজনীতির কার্যালয় বানানোর অপচেষ্টা চলছে জানিয়ে বলা হয়, বিগত সময়ে গেস্টরুম-গণরুমের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। এসব করা হতো শুধু তাদের ফ্যাসিবাদ স্বার্থ হাসিলের জন্য। ক্যাম্পাসে এ ধরনের নোংরা দলীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীদের ভাষ্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৯টা দফার মধ্যে একটি দফা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। এখন কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে, ইনিয়ে-বিনিয়ে দখলদারি এবং লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির কথা বলছে।
দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকে সব দলের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি বন্ধ এবং দ্রুত ডাকসুর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিজয় একাত্তর হলের ছাত্র নাফিউর রহমান, জিয়া হলের ফরহাদ হোসেনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।