বেশির ভাগ গ্রাহকের পছন্দ ৩ দিনের ডেটা প্যাকেজ, কিন্তু সেটাই বাতিল হচ্ছে
ঢাকায় থাকেন খেলু ব্যানার্জী। হবিগঞ্জে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন তিনি। এ কাজে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে তিন দিন মেয়াদি ডেটা প্যাকেজ কেনেন। তবে এ মেয়াদের ডেটা প্যাকেজ বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে খেলু ব্যানার্জী বলেন, এতে বড় মুশকিলে পড়বেন তিনি।
৩ সেপ্টেম্বর মুঠোফোনের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে নতুন একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে ডেটার ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজ থাকছে না। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্যাকেজের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৪০টি। আর মেয়াদ হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড (নির্দিষ্ট মেয়াদহীন)। এটি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশে এখন অপারেটর ভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন।
এর আগে একটি জরিপ চালিয়েছিল বিটিআরসি। গত ৩০ মে প্যাকেজ ও ডেটার মূল্যসংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় ওই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ডেটা ব্যবহারকারীদের ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ চেয়েছিলেন ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড—বিদ্যমান পাঁচটি মেয়াদই বহাল থাকুক। অপর দিকে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রাহক ৭, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদের প্যাকেজের পক্ষে ছিলেন। সে অনুযায়ী ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদ বাতিল করা হয়।
এদিকে মুঠোফোন অপারেটরদের দেওয়া তথ্য বলছে, তিন দিনের মেয়াদের প্যাকেজ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি না থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অপারেটরদের সূত্রে জানা যায়, দেশে গ্রাহকদের ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ৩ দিনের মেয়াদ, ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ ৭ দিনের মেয়াদ, ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ ১৫ দিনের মেয়াদ এবং ১০ দশমিক ১১ শতাংশ ৩০ দিনের মেয়াদ ব্যবহার করে থাকেন।
মুঠোফোন অপারেটর বাংলালিংক জানিয়েছে, তাদের ডেটার প্রায় ৫০ শতাংশই ৩ দিনের গ্রাহক। তারা ৩ দিনের প্যাকেজে ১ জিবি (গিগাবাইট) থেকে ১০ জিবি পর্যন্ত ডেটা অফার করে। এর দাম ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলালিংকের দাবি, এসব প্যাকেজের গ্রাহকেরা ডেটার প্রায় ৯০ শতাংশ ৩ দিন মেয়াদের মধ্যে ব্যবহার করে থাকেন।
অপারেটররা ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড মেয়াদে সর্বোচ্চ ৯৫টি পর্যন্ত প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিল। তবে বিআরটিসি ৪০টি প্যাকেজে নামিয়ে আনছে।
বিটিআরসির জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশি ছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী। স্বল্প আয়ের মানুষ ছিলেন কম। অপারেটররা বলছে, এই স্বল্প আয়ের মানুষেরাই ৩ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করেন বেশি। এ প্যাকেজ বন্ধ হলে গ্রাহকদের খরচ বেড়ে যাবে। তাঁদের বেশি দামে অন্য প্যাকেজ কিনতে হবে। এ কারণে সার্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৩ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করলে মূলত তরুণ ও স্বল্প আয়ের ব্যবহারকারীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে। দেশের অনেক ব্যবহারকারী মাসব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহার করার সামর্থ্য রাখেন না।
অপারেটররা ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড মেয়াদে সর্বোচ্চ ৯৫টি পর্যন্ত প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিল। তবে বিআরটিসি ৪০টি প্যাকেজে নামিয়ে আনছে। তাদের যুক্তি, গ্রাহক অতিরিক্ত প্যাকেজে বিভ্রান্ত হন এবং তাঁদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই সংখ্যা কমানো হচ্ছে। বিটিআরসির জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহক ৪০ থেকে ৫০টি প্যাকেজের পক্ষে। অপর দিকে ৭১ থেকে ৮৫টি প্যাকেজের পক্ষে ছিলেন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাহক।
তবে অপারেটররা বলছে, গ্রাহকের ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে তারা একই ধরনের ৪ থেকে ৫টি প্যাকেজ দিয়ে থাকে। গ্রাহক সেখান থেকেই তাঁর পছন্দের প্যাকেজ নিয়ে থাকেন। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। প্যাকেজের সংখ্যা কমে গেলে গ্রাহকের পছন্দের সীমাও কমে যাবে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে এখন অপারেটর ভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। প্যাকেজের সংখ্যা ৪০টি করা হলে তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। গ্রাহকের চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজের সংখ্যা নির্ধারণে কোনো সীমা থাকা উচিত নয়।