বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বন্ধ থাকা তিনটি চিনিকলে ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) বসিয়ে অর্থ অপচয়ের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ২৮ জন নাগরিক। এ ঘটনার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীদের শনাক্তে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এই অপচয়ের প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
২৮ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমগুলোতে এ বিবৃতি পাঠান অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। এ বিষয়ে ১৩ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘বন্ধ চিনিকলে ইটিপি বসিয়ে অর্থ অপচয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিস্ময় প্রকাশ করে আজকের বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন তিনটি চিনিকল বছরের পর বছর বন্ধ থাকার মধ্যেই অতি সম্প্রতি ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। এই বন্ধ থাকা চিনিকল তিনটি হচ্ছে গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলস লিমিটেড, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড এবং পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকল ২০০৪ সাল থেকেই বন্ধ আছে। এই চিনিকলের নামে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে আখ উৎপাদনের জন্য যে ১ হাজার ৮৪০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে এখন আর কোনো আখও উৎপাদিত হয় না। বরং সেসব জমিতে ধান, গম, সবজিসহ সারা বছর কমপক্ষে তিনবার অন্য ফসল ফলানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে বিরাজমান নানা সংকটের মধ্যে সরকার যখন সব ধরনের অপচয় রোধ ও কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে, ঠিক সে সময়ে বন্ধ কারখানার জন্য অপ্রয়োজনীয় ইটিপি স্থাপনে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প নিতে পারে, করদাতা হিসেবে সেটাই প্রশ্ন। তাতে বলা হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীভাবে এই অপচয়ের প্রকল্পগুলো অনুমোদন দিয়েছে, সেটাও দেশবাসীর জানার অধিকার আছে।
যেসব শিল্পে দরকার, সেখানে ইটিপি স্থাপনে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে উদ্যোগ ও তাগিদ একান্ত কাম্য, সেটা প্রায় অনুপস্থিত বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। তাতে বলা হয়, সাভারের ট্যানারিশিল্পসহ অন্যান্য অনেক কারখানায় ইটিপি বসানো হলেও তা কার্যকরভাবে নিয়মমতো চালু রাখা হয় না, যার পরিণতি পরিবেশের জন্য ভয়াবহ। এসব ব্যাপারে সরকারের তদারকি কিংবা আইন প্রয়োগের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। অথচ অপ্রয়োজনীয় ইটিপি বসিয়ে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
বন্ধ চিনিকলের ইটিপি বসানো ছাড়াও আর কোন কোন ক্ষেত্রে এ ধরনের জনগণের অর্থের অপচয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্প বানিয়ে একশ্রেণির লোকের লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য সরকারের কাছে দাবি এবং গণতদন্ত কমিশন গঠনের জন্য নাগরিক সমাজের কাছেও আহ্বান জানান দেশের এই বিশিষ্টজনেরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, অধ্যাপক আবুল বারকাত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহসভাপতি তবারক হোসেইন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নুর খান, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান, আইনজীবী মো. আশরাফ আলী, আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী শুভ্র চক্রবর্তী, মানবাধিকারকর্মী রোজিনা বেগম, আদিবাসী ফোরামের সদস্য দীপায়ন খীসা, সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সুমাইয়া খাতুন ও অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ।