জনপ্রশাসন সংস্কারে কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদে আন্দোলনের ঘোষণা ২৫টি ক্যাডারের

আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের নেতারা। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পূর্ত ভবনে,শনিবারছবি: সংগৃহীত

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ কোটা এবং বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, এবার তা মানতে চাচ্ছে না ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। সংগঠনটি প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা ও কোটামুক্ত উপসচিব পুলের দাবিতে কলমবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পূর্ত ভবনে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের পৃথক সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় সভা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ২৫টি ক্যাডারের পৃথক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংগঠনটির ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী সোমবার প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা সব অফিসে কলমবিরতি, ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। আর যেসব বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জনপ্রশাসনে সংস্কার আনতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এই কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এ কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

কমিশনের সুপারিশের মধ্যে থাকছে, জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা।

কমিশনের এসব সুপারিশের প্রতিবাদে এর আগে প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। এবার আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ তাদের দাবি ও আন্দোলন কর্মসূচির কথা জানাল।

আজ সভায় বক্তারা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকারের সব নীতিনির্ধারণ করে এবং বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয় বেসামরিক প্রশাসন; যা বর্তমানে ২৬টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত। কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) আমূল পরিবর্তন দরকার। অথচ কমিশন বৈষম্যমূলকভাবে উপসচিব পদে একটি ক্যাডারের (প্রশাসন) জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশের বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে ধরেছে। এতে ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন

মতবিনিময় সভায় বক্তারা আরও বলেন, কমিশনের এ সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে একটি গোষ্ঠী ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ থেকে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে নিজ নিজ ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। বর্তমানে প্রতিটি খাতে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা, যাঁরা সেই খাত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। ফলে এসব খাত কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। এ ছাড়া সব খাতে একটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সব খাতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করতে সংস্কার কমিশনের চাওয়া জনমনে নতুন সন্দেহের উদ্রেক করেছে বলে মনে করেন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতারা। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত সিভিল সার্ভিসের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাঁরা বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি।