মার্চ মাসকে ‘কলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মার্চ মাসে আয়োজিত হয় নানা সতর্কতামূলক আলোচনা, সেমিনার ও গবেষণা ইত্যাদি। এরই অংশ হিসেবে সবার মধ্যে কলোরেক্টাল ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। অনুষ্ঠানটি সোমবার (১৭ মার্চ) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট ও অনকোলজিস্ট ডা. অরুণাংশু দাস।
এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘কলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে কীভাবে সচেতনতা বাড়ানো যায়’। বাংলাদেশে কলোরেক্টাল ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, স্ক্রিনিং, সচেতনতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. অরুণাংশু দাস।
শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান, বাংলাদেশে কলোরেক্টাল ক্যানসারের পরিসংখ্যান কেমন?
উত্তরে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘আমরা ক্যানসারের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেটা অনুসরণ করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেটা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ছয় হাজার মানুষ কলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং সাড়ে তিন হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সংখ্যা কম মনে হলেও আমাদের ধারণা, প্রকৃত সংখ্যা বেশি হতে পারে। কারণ, এসব পরিসংখ্যানে অনেকের তথ্য বিভিন্ন কারণে উঠে আসে না।’
কলোরেক্টাল ক্যানসার কি বংশগত রোগ? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘কলোরেক্টাল ক্যানসার বংশগতভাবে আসতে পারে। অর্থাৎ পরিবারে যদি ফার্স্ট-ডিগ্রি কিংবা সেকেন্ড-ডিগ্রি আত্মীয়দের মধ্যে কারও কলোরেক্টাল ক্যানসার হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মে কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সুতরাং বলা যেতে পারে, কলোরেক্টাল ক্যানসার বংশগত রোগ।’
কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘কলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে বয়সের একটি যোগসূত্র রয়েছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। দ্বিতীয়টি হলো, জেনেটিক রিস্ক ফ্যাক্টর। এই দুটি রিস্ক ফ্যাক্টর অপরিবর্তনযোগ্য। তবে বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে, যেগুলো পরিবর্তনযোগ্য। যেমন খাদ্যাভ্যাস। ফাস্ট ফুড ও মাংস বেশি খেলে এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। আর ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার এবং শাকসবজি বেশি খেলে কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রমের অভাবেও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে ধূমপান কিংবা তামাক গ্রহণের কারণেও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
কলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং সম্পর্কে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘স্ক্রিনিংটা দুইভাবে বিভক্ত। যাঁদের পরিবারে কারও কলোরেক্টাল ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে আর যাঁদের পরিবারের ইতিহাস নেই। যাঁদের পরিবারের ইতিহাস নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়স ৪৫ বছরের বেশি হলে অবশ্যই একটি কলোনোস্কোপি টেস্ট করতে হবে। আর এই টেস্টটি একবার করলে ১০ বছর পর আবার করতে হবে। আর যাঁদের পরিবারে কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কলোনোস্কপি টেস্ট করতে হবে। তবে পার্থক্য শুধু বয়সের ক্ষেত্রে। পরিবারের যে সদস্যের ক্যানসার হয়েছে, তাঁর কোন বয়সে সেটি হয়েছে, তা জানতে হবে। যদি ৫০ বছর বয়সে হয়ে থাকে, তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সেই বয়সেই টেস্টটি করাতে হবে।’
কলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে বলেন, ‘কলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এ ছাড়া প্রাথমিক স্তরে মলের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে, মলের রং কালো হয়ে যেতে পারে এবং পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। তবে রোগটি যদি অ্যাডভান্সড স্টেজে চলে যায়, তাহলে জন্ডিস, পিঠের হাড়ে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।’
ক্যানসার নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো প্রসঙ্গে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, ক্যানসার প্রতিকারযোগ্য কোনো রোগ নয়। অনেকে এটাকে মৃত্যু নিশ্চিত বলে ধরে নিয়ে চিকিৎসাই নিতে চান না। এই ভুল ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।’
বাংলাদেশে ক্যানসারের চিকিৎসার মান যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও রোগীরা কেন দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. অরুণাংশু দাস বলেন, ‘আমাদের দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থার অভাবের কারণেই মূলত এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু আশার বিষয় হলো, দেশের বাইরে গিয়েও যখন তাঁরা আমাদের কথার সঙ্গে মিল পান, তখন তাঁরা আমাদের কাছেই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হন।’