মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে অভিযোগ পর্যালোচনা করছে মন্ত্রণালয়
মালয়েশিয়ায় গিয়ে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা প্রতারিত হচ্ছেন বলে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন জাতিসংঘের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। এতে যুক্ত চক্রের সঙ্গে দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগও করা হয় বিবৃতিতে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে এসব অভিযোগ পর্যালোচনা করছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এটা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা এটা জানান। আজ রোববার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা আয়োজিত হয়।
এতে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, অভিবাসন নিয়ে কোনো অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা সমাধানে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে তৎপরতা অব্যাহত আছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
মো. রুহুল আমিন বলেন, জাতিসংঘের বিবৃতিটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এরপর সংস্থাটিকে এ বিষয়ে জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া নতুন কর্মী প্রবেশে ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। তারা নতুন করে কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থাপনা তৈরি করছে। এটি চূড়ান্তের আগে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে দুই দেশের গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটির সভা আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়ার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মে মাসে এ সভা করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগে চক্রের জড়িত থাকার বিষয় নিয়েও কমিটির সভায় আলোচনা হতে পারে।
কাল সোমবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। দেশটিতে কর্মী পাঠানো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে এবারের সফরে। এ নিয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, কর্মী নিয়োগ নিয়ে ১৯৮৮ সালে করা একটি চুক্তি আছে কাতারের সঙ্গে। এর আওতায় পেশাদার বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। তবে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা নেই। এখন দেশটিতে আছে চার লাখ বাংলাদেশি কর্মী। নতুন করে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা, দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়, দেশটিতে থাকা প্রবাসীদের সহায়তা করা, নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করতেই নতুন করে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনের পর এই প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন নতুন প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী। শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষ কর্মী পাঠালে দেশেরও সুনাম, বিদেশেও সুনাম। বেশি করে দক্ষ কর্মী পাঠাতে সরকার কাজ করছে।
এরপর নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অর্জন তুলে ধরেন সচিব মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, অভিবাসন জটিল বিষয়। এটি এক দেশের ওপর নির্ভর করে না। এতে দুই দেশ যুক্ত থাকে। জর্ডান, মাল্টায় কর্মী পাঠানোর চুক্তি চূড়ান্তের দিকে আছে। মরিশাসে নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত।
বন্ধ শ্রমবাজার ব্রুনেইয়ে কর্মী পাঠানো আবার শুরু করতে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। এ ছাড়া বন্ধ শ্রমবাজার কুয়েত স্বাস্থ্যকর্মী (নার্স) নিয়োগের চাহিদা জানিয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। মতবিনিময় সভা সঞ্চালন করেন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মামুনুর রহমান।