‘বীরনিবাস’ নির্মাণে অতিরিক্ত ১৮০০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি
‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ১৮০০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ‘বীরনিবাস’ নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। যথাসময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮২২ কোটি ২০ লাখ ‘বিশেষ বরাদ্দ’ চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই অর্থ না পেলে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আধা সরকারি পত্র দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ উপহার ‘বীরনিবাস’। ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সবশেষ সভায় এ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৭টি বীরনিবাসের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে ১৮ হাজার ৯৪৩টির নির্মাণকাজ।
এই প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সম্প্রতি আধা সরকারি পত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে ওই ‘বিশেষ বরাদ্দ’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা রয়েছে। এ হিসাবে সর্বশেষ অনুমোদিত ব্যয় অনুযায়ী প্রকল্পটির অনুকূলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপিতে ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে প্রকল্পটি কোনোভাবেই নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে করতে হলে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮২২ কোটি ২০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে
‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বীরনিবাস নির্মিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুরুতে ২০২১ সালের মার্চে ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে অনুমোদিত হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরে। কিন্তু সময়মতো কাজ এগোয়নি।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে করতে হলে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮২২ কোটি ২০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
পরে মোট ৬ হাজার ৯৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করে একনেক। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্পটির অনুকূলে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) মোট ৯১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে আগামী অর্থবছরে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে অতিরিক্ত ‘বিশেষ বরাদ্দ’ চাওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে লেখা আধা সরকারি পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপিতে প্রাপ্ত বরাদ্দের (৮৫০ কোটি) অতিরিক্ত ১ হাজার ৮২২ কোটি ২০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা বলছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৪২ হাজার ব্যক্তির নাম বিভিন্ন সময় গেজেটভুক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৯০ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ভাতা (মাসিক সম্মানী) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও সরকার বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে অসচ্ছলদের।
বীরনিবাস কেমন হয়
বীরনিবাস পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হালকা সবুজ রঙের দেয়াল। তাতে লাল আর সবুজে আঁকা দুটি সরলরেখা, যেন বাংলাদেশের পতাকার প্রতিচ্ছবি। বাড়ির সামনে নামফলক, লেখা ‘বীরনিবাস’। পাকা বাড়িগুলো একতলা। দেয়াল ইট ও সিমেন্টের। ছাদ পাকা। প্রতিটি বীরনিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একেকটিতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে একটি উঠান, একটি নলকূপ এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য আলাদা জায়গা ও ছাউনি।
সরকারের একটি কমিটি অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করে। কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও। অসচ্ছল যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। অগ্রাধিকার তালিকায় আরও আছেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার অসচ্ছল স্ত্রী ও সন্তানেরা। নিয়ম অনুযায়ী, অসচ্ছল বীরাঙ্গনারা সরাসরি পাকা বাড়ি বরাদ্দ পাবেন।