রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ চায় পুলিশ

গণ–আন্দোলন দমাতে পুলিশকে এভাবেই ব্যবহার করেছে বিগত সরকার। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়প্রথম আলো ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের পদোন্নতি, পদায়ন, বদলি, নিয়োগ, পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারত্বের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাহিনী পরিচালনায় স্বতন্ত্র কমিশন চান পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই আলোচনাগুলো উঠে এসেছে। এতে কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশকে সেবামুখী করতে পেশাগত মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও পদোন্নতি-পদায়নে লেনদেন বন্ধ করতে হবে। সংস্কারের আগে সমস্যার মূলে যেতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। পুলিশ কেন মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেই উত্তর খুঁজতে হবে। এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে পুলিশকে সত্যিকারের জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।

এমন প্রভাবশালীদের অনেকে টাকার বিনিময়ে উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল নিয়োগে জড়িত ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তরে ১৫ অক্টোবর সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) ময়নুল ইসলামসহ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৫০–৬০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।

পুলিশ সদস্যদের আগের অভিজ্ঞতা, সংকট ও সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ কমিশন শুনেছে। সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হবে।
সফর রাজ হোসেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান

সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বে কমিশনের আটজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি চূড়ান্ত না হওয়ায় বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন না।

বৈঠকের কার্যবিবরণী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার বিস্তারিত জানা যায়। বৈঠকের শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাহিনীর বর্তমান অবস্থা ও সংস্কারের নানা দিক নিয়ে একটি ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ দেওয়া হয়। এরপর আলোচনায় অংশ নেন কর্মকর্তারা।

আলোচনার এক পর্যায়ে কমিশনের একজন সদস্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বিষয়ে কথা বলেন। এই বোর্ড পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) থেকে ওপরের পদগুলোতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়।

এই বোর্ডে আইজিপি সদস্য না হওয়ায় পদোন্নতিতে সব সময় কর্মকর্তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয় না বলে বৈঠকে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। এ সময় বিগত সরকারের সময় পুলিশের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলিতে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ নানা অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেন নিয়ে কথা বলেন কর্মকর্তারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সিন্ডিকেট দিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদোন্নতি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই সিন্ডিকেটে ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, চারজন উপসচিব ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করা সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব। বদলি–পদোন্নতিতে এমন সিন্ডিকেটের কারণে পুলিশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বাহিনীতে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশও মানতেন না। এমন প্রভাবশালীদের অনেকে টাকার বিনিময়ে উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল নিয়োগে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে প্রয়োজন স্বাধীন পুলিশ কমিশন। তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ দিলে অবৈধ লেনদেন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
বাহারুল আলম, এসবির সাবেক প্রধান

এ অবস্থা থেকে পুলিশকে বের করে আনতে বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন কর্মকর্তারা। বৈঠকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংস্কারের ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ‘খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশ’ এবং এর আগে যেসব পুলিশ কমিশন বা কমিটি হয়েছে, সেখান থেকেও অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি কমিশনের পরিধি বাড়িয়ে এতে একজন বিচারক এবং একজন গণমাধ্যমকর্মীকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দ্রুত একজন ছাত্র প্রতিনিধিকে কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

এরই মধ্যে কমিশনের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, কমিশনের প্রাথমিকভাবে আরও দুজন সদস্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিচার বিভাগের একজনকে রাখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মনোনয়নের বিষয়টিও দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংস্কার কমিশনের সদস্যরা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলাপ–আলোচনা ও পরামর্শ করছেন। এ সময় আরও বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব সফর রাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের আগের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, সংকট ও সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ কমিশন শুনেছে। সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশকে উত্তম চর্চার ধারায় ফেরানোর প্রস্তাবও থাকবে। এ ছাড়া ২০০৭ সালের পুলিশ অধ্যাদেশের খসড়া কমিশনকে দেওয়া হলে সেটাও বিবেচনা করা হবে।

আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাই। মানুষকে প্রত্যাশিত সেবা দিতে চাইলে এ কাজ করতেই হবে। এটা বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা লাগবে।
সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শেখ সাজ্জাদ আলী

পরিচালনার ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষার দাবি

কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের কর্মকর্তারা বাহিনী পরিচালনার ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, পুলিশের ওপর বিভিন্ন সময়ে অনিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা পুলিশকে তার নিয়মিত কাজে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ পুলিশিংয়ের দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পুলিশের। কিন্তু বাহিনীর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা (নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন), লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা, প্রণোদনাসহ বিভিন্ন বিষয় যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিত করতে পুলিশের ক্ষমতা সীমিত। এতে পুরো বাহিনীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বৈঠকে পুলিশের পদোন্নতির ক্ষেত্রে আইজিপিকে এসএসবি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কমিশনের সদস্যরাও একমত পোষণ করে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করার ওপর গুরত্বারোপ করেন।

পুলিশ যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে, প্রভাবমুক্ত হয়ে, সততা, দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সে জন্য জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বৈঠকে উঠে আসে।

শ্রীলঙ্কার কমিশন থেকেও অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরামর্শ দেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার পুলিশ পরিচালনায় ক্ষমতার সুন্দর ভারসাম্য আছে। সেখানে পুলিশ কমিশন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নয়; বরং সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ। এ কারণে ওই দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক কিছু হলেও পুলিশে ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়নি। আমরা সেই অভিজ্ঞতা নিতে পারি।’ তিনি বলেন, প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনে নাগরিক সমাজের ৪ জন প্রতিনিধি, সরকারি ও বিরোধী দলের ২ জন করে ৪ জন সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ১০–১২ জন সদস্য রাখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শেখ সাজ্জাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাই। মানুষকে প্রত্যাশিত সেবা দিতে চাইলে এ কাজ করতেই হবে। এটা বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা লাগবে।’

পুলিশের বিভিন্ন কল্যাণ (আট ঘণ্টা ডিউটি, ছুটি, ঝুঁকি ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি) নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে সংস্কার কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া জনগণকে দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় জরুর সেবা ৯৯৯–এর সক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও সংস্কার প্রস্তাবে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।

নতুন ইউনিট গঠনসহ আরও পরামর্শ

সংস্কার কমিশনের সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে আরও কিছু পরামর্শ বা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন সময়ের প্রয়োজনে পরিবেশ পুলিশ, সাইবার পুলিশ, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটসহ আরও কিছু নতুন ইউনিট গঠনের কথা এসেছে। সাইবার অপরাধ, আর্থিক অপরাধ ও আন্তদেশীয় অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও এসেছে। পুলিশের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ দূর করে নীতিনির্ভর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা (নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, পুরস্কার, শাস্তি ইত্যাদি) নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

বৈঠকে কমিশনকে জানানো হয়, বর্তমানে পুলিশের বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রয়োজন ১৬ হাজার ১২৪টি; কিন্তু আছে ১০ হাজার ৯৪৬টি। পুলিশি কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনারও দাবি জানান কর্মকর্তারা।

বর্তমানে পুলিশে নারী সদস্য রয়েছে মোট জনবলের ৮ শতাংশ। জেন্ডার ইস্যু মোকাবিলায় আরও অধিক সংখ্যক নারী নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় বৈঠকে। পুলিশের বিভিন্ন কল্যাণ (আট ঘণ্টা ডিউটি, ছুটি, ঝুঁকি ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি) নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে সংস্কার কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া জনগণকে দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় জরুর সেবা ৯৯৯–এর সক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও সংস্কার প্রস্তাবে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।

এখন অপরাধের ধরন বদলেছে। তাই পুলিশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও আর্থিক অপরাধ। সংস্কার প্রস্তাব তৈরিতে এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখার জন্য কমিশনকে বলেছি
অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) মো. মতিউর রহমান শেখ

আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব

ঔপনিবেশিক যুগের পুলিশ আইন-১৮৬১, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলসহ অন্যান্য আইন ও বিধি প্রয়োজনীয়তার আলোকে সংশোধনের প্রস্তাব আসে বলে বৈঠকের কার্যবিবরণীতে আসে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের অনেকগুলো বিষয় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আদর্শের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক। এ ছাড়া অন্যান্য বিদ্যমান আইন, যেগুলো বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখে, সেগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। এ জন্য আধুনিক ও জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে পুলিশ কমিশন গঠন এবং পুলিশ আইনসহ অন্যান্য আইন ও বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রয়োজন।

কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং, ওপেন হাউস ডে, নারী শিশু বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মতো জনবান্ধব কার্যক্রমগুলো গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনার জন্য পরামর্শ দেন কমিশনের সদস্যরা।

অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) মো. মতিউর রহমান শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন অপরাধের ধরন বদলেছে। তাই পুলিশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও আর্থিক অপরাধ। সংস্কার প্রস্তাব তৈরিতে এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখার জন্য কমিশনকে বলেছি।’

থানায় সেবা বৃদ্ধির ওপর জোর

থানায় সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে একধরনের ভীতি বা অনীহা কাজ করে। এর থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ বিষয়গুলো সংস্কার প্রস্তাবে রাখার বিষয়ে মত দিয়েছেন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।

তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মানুষ যাতে অহেতুক হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সাক্ষী হাজির ও লাশ ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

ভবিষ্যতে পুলিশের মাধ্যমে কোনো নাগরিক যাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা নির্যাতনের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখার বিষয়টিও আলোচনায় আনেন কমিশনের সদস্যরা।

বিদেশে পুলিশ পুনর্গঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান বাহারুল আলমের। তাঁর মতে, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে প্রয়োজন একটি স্বাধীন পরিচালনাকারী কমিশন বা কর্তৃপক্ষ। সেই কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে দক্ষ ও যোগ্য লোক দিয়ে। কমিশন যখন দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ দেবে, তখন অবৈধ লেনদেন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি হবে, সঠিক ব্যক্তি সঠিক জায়গায় বসতে পারবেন। ভালোকে পুরস্কৃত ও অপরাধীকে শাস্তির ক্ষেত্রে পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে পুলিশের সামগ্রিক শৃঙ্খলাও ফিরে আসবে।