চটগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষের ভিড়। সবাই এসেছেন খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) চাল কিনতে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েও তাঁরা চাল পাননি। তার আগেই চাল বিক্রি শেষ। এ নিয়ে হা–হুতাশ করছিলেন তাঁরা। তাঁদের একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব গীতা বিশ্বাস একপর্যায়ে উঠে পড়লেন ওএমএসের চাল বিক্রির ট্রাকে। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চাল কুড়িয়ে হাতের থলেতে ভরছিলেন। আজ রোববার কমার্স কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য।
গীতা ট্রাকে চাল কুড়ানোর সময় ট্রাকের লোকজন তাঁর কাছ থেকে থলেটি কেড়ে নিতে চাইলে তিনি ট্রাকে বসে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে কুড়িয়ে নেন প্রায় দেড় কেজি চাল। পরে আশপাশের মানুষের সহায়তায় তাঁকে ট্রাক থেকে নামানো হয়। এ সময় আশ্বাস দেওয়া হয়, ওএমএসের চাল বিক্রির পরবর্তী দিনে তাঁকে চাল দেওয়া হবে।
ট্রাক থেকে নেমে আসার পর কথা হয় গীতার সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামীসহ পাশের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ভিক্ষা করে তাঁদের সংসার চলে। বাজার থেকে চাল কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ওএমএসের ৩০ টাকা কেজির চালই ভরসা। কিন্তু আজ চাল পাননি। দুপুরে রান্নার চাল নেই। তাই ট্রাকে উঠে পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে নিয়েছেন।
গীতা বিশ্বাস বলেন, সকাল ছয়টার দিকে এসে সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সে সময় নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০ জন ছিলেন। সারিতে জায়গা রেখে নাশতা খেতে পাশের দোকানে যান তিনি। এরপর ফিরে এলে তাঁকে আর সারিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। চাল না পেলে আজ খাওয়া হবে না তাঁর। দুজনের সংসারে পাঁচ কেজি চাল তাঁর অনেক কাজে দিত।
গীতার সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তিরা বলেন, গীতার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। ভিক্ষা করেই সংসার চালান তিনি। সকাল সাতটার আগেই চালের জন্য এসে সারিতে দাঁড়ান তিনি। এরপর নাশতা করতে পাশের দোকানে যান। পরে ট্রাক এলে ধাক্কাধাক্কিতে আর চাল পাননি তিনি। তাই ট্রাকে উঠে পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে নেন তিনি।
ওএমএস ডিলার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ট্রাক এলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে সারি ঠিক থাকে না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন বরাদ্দ থাকে ৪০০ জনের। ফলে সবাইকে চাল দেওয়া সম্ভব হয় না। এই এলাকায় চাহিদা বেশি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাল বিক্রি শুরু হলেও দুই ঘণ্টার মধ্যেই চাল শেষ হয়ে গেছে।
কমার্স কলেজের সামনে ওএমএস কার্যক্রমের পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন নাজমুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি ট্রাকে বরাদ্দ থাকে দুই মেট্রিক টন। জনপ্রতি পাঁচ কেজি হারে ৪০০ জনকে দেওয়া যায়। এই এলাকায় চাল প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেশি। বৃদ্ধ ও নারীদের দ্রুত চাল দেওয়ার জন্য ডিলারদের বলা হয়েছে।