টিএসসিতে মানুষের ঢল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সংগ্রহ: কেউ দিচ্ছেন জামাকাপড়, কেউ খাবার, কেউ–বা নগদ টাকা
বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৃতীয় দিনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নেমেছে। শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগে অংশীদার হতে আজ শনিবার নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ অর্থ কিংবা ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিতে আসছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
আজ সকাল ১০টা থেকে টিএসসির ফটকে স্থাপিত বুথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় দেখা যায়, কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে, কেউ কেউ ছোট ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে টিএসসিতে আসছিলেন। টিএসসির ফটকের বুথে থাকা শিক্ষার্থীরা দাতার নাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে রাখছিলেন খাতায়। বিকেল থেকে টিএসসিতে ত্রাণ দিতে আসা মানুষের ঢল নেমেছে। হ্যান্ডমাইকে নানা নির্দেশনা দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এ উদ্যোগে শামিল কেউ জামাকাপড়, কেউ বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন, কেউ মুড়ি-চিড়া, কেউ–বা বিস্কুট, আবার কেউ খেজুরসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার নিয়ে আসছেন। স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রছাত্রীরা সেগুলো হাতে কিংবা কাঁধে করে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ায় জমা করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ উদ্যোগে কেউ কেউ নগদ অর্থ দিয়েও শামিল হচ্ছেন। বুথে বসা শিক্ষার্থীরা খাতায় অনুদানের অঙ্ক লিখে টাকা জমা রাখছেন। ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহ চলবে রাত আটটা পর্যন্ত।
টিএসসির ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ার পাশাপাশি ভেতরের মাঠে চলছে ত্রাণের পণ্যের প্যাকেজিং। ছাত্রছাত্রীরা ত্রাণ নির্ধারিত ব্যাগে ভর্তি করছেন। রাতে ট্রাকে করে সেগুলো পাঠানো হবে দুর্গত এলাকায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি জমা পড়ে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা। দিনভর ত্রাণ সংগ্রহের পর রাতে প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন ছাত্রছাত্রীরা। পরে রাতেই কয়েকটি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। গতকাল শুক্রবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়ে। পাশাপাশি জমা পড়ে প্রায় ৫০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী। প্যাকেজিংয়ের পর টিএসসি থেকে প্রতি রাতে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছে ত্রাণের ট্রাক।
এ ছাড়া দুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ২০০টি স্পিড বোটে করে গত বৃহস্পতিবার দুর্গত এলাকায় গেছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইংয়ের সদস্য আবদুল্লাহ সালেহীন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, দুই থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী টিএসসিতে ত্রাণ সংগ্রহ ও প্যাকেজিংয়ের কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। দুর্গত এলাকায় কার্যক্রম সমন্বয় করতে কয়েক শ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও করা হয়েছে কমিটি। সমন্বয় করে ত্রাণ সংগ্রহ ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের বিষয়টির ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরু হওয়ার পর গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এ উদ্যোগের ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের আহ্বান জানান বাকের। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।