গণিতে ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে মেয়েরা: ইউনিসেফ
সারা বিশ্বে গণিতে ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে মেয়েরা। এর মূল কারণ পুরুষতান্ত্রিক প্রাধান্য এবং সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা নিয়ে গৎবাঁধা মনোভাব। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
‘সলভিং দ্য ইকুয়েশন: হেলপিং গার্লস অ্যান্ড বয়েজ লার্ন ম্যাথমেটিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডের নতুন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের গণিতের দক্ষতা অর্জন ১ দশমিক ৩ গুণ পর্যন্ত বেশি।
গণিত বুঝতে মেয়েদের সহজাত অক্ষমতা সম্পর্কে শিক্ষক, মা-বাবা ও সহপাঠীদের লিঙ্গভিত্তিক নেতিবাচক প্রথাগত আচরণ এবং গৎবাঁধা মনোভাব এই বৈষম্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। এটি মেয়েদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায় এবং তাঁদের ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘ছেলেদের মতোই গণিত শেখার সমান সক্ষমতা মেয়েদের আছে। তাদের যেটা অভাব, সেটা হলো—এসব গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের সমান সুযোগ।’
তিনি বলেন, ‘লিঙ্গভিত্তিক নেতিবাচক প্রথাগত আচরণ এবং গৎবাঁধা মনোভাব আমাদের দূর করতে হবে, যা মেয়েদের পিছিয়ে দেয়। প্রতিটি শিশুকে বিদ্যালয়ে এবং জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক দক্ষতা শিখতে সাহায্য করার জন্য আমাদের আরও বেশি কিছু করতে হবে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গণিতের দক্ষতা স্মৃতিশক্তি, বোধগম্যতা ও বিশ্লেষণকে শক্তিশালী করে। ফলে বাচ্চাদের সৃজনশীলতার দক্ষতা উন্নত হয়।
আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ ‘ট্রান্সফরমিং এডুকেশন সামিট’ সামনে রেখে ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, যেসব শিশু প্রাথমিক গণিত ও অন্যান্য মৌলিক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে না, সমস্যা সমাধান ও যৌক্তিক যোগসূত্রতা অনুধাবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।
প্রতিবেদনে ৩৪টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। চতুর্থ শ্রেণির (গ্রেড–৪) চার ভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী মৌলিক সংখ্যাগত দক্ষতা অর্জন করছে না। পাশাপাশি ৭৯টি মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশের তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ১৫ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এখনো গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি।
এ ক্ষেত্রে পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতারও প্রভাব রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে ওঠার সময় সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের তুলনায় সংখ্যার দক্ষতা অর্জনে সবচেয়ে ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি এগিয়ে থাকে। যেসব শিশু শৈশবের প্রথম দিকে শিক্ষা গ্রহণ এবং এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, ১৫ বছর বয়সে তারা অন্যদের চেয়ে ২ দশমিক ৮ গুণ পর্যন্ত গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব সম্ভবত শিশুদের গণিতের দক্ষতাকে আরও খারাপ করেছে। এই পর্যালোচনায় বর্তমানে যেসব ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে পড়াশোনারত, তাদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব দেশে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ কম, সেসব দেশে গণিতের দক্ষতার এই বৈষম্য খুব সম্ভবত আরও বেশি।
সব শিশুকে মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দিতে সরকারগুলোকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘শিশুদের একটি পুরো প্রজন্মের পড়াশোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখন ফাঁকা প্রতিশ্রুতির সময় নয়। প্রত্যেক শিশুর শিক্ষা নিশ্চিতে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এবং এখনই সেটা প্রয়োজন।’