ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধের ৩৮ ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম

  • নানা অপরাধে জড়িত থাকায় সাড়ে ১১ মাসে বহিষ্কার ও অব্যাহতি পেয়েছেন ২১ নেতা-কর্মী।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীকে।

  • মারামারি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়।

ছাত্রলীগের লোগো

রাজধানীর বঙ্গবাজারে এক ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয় গত ৩১ জানুয়ারি রাতে। ওই ঘটনায় ফাঁস হওয়া মুঠোফোন আলাপ থেকে জানা যায়, চাঁদা না পেয়ে ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাঁদের পাঠিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান।

ঘটনাটির পর ১২ ফেব্রুয়ারি ইমদাদুলকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কিন্তু গত ১৩ জুলাই ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁকে বিজ্ঞানবিষয়ক উপসম্পাদকের পদ দেওয়া হয়।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনাটির মতো গত জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১১ মাসে ৩৮টি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধর ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম এসেছে। নানা অপরাধে জড়িত থাকায় এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার ও পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ২১ জন।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীকে, যাঁরা ছিনতাই ও মারধরে জড়িত ছিলেন। অবশ্য প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে মারামারি, চাঁদাবাজি, সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও এগুলো শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা।

অনেক সময় অনেক ঘটনার কথা গণমাধ্যমে এলেও আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেন না৷ অনেক ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে অভিযোগ না পাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তা সম্ভব হয় না৷
মুহাম্মদ মাহবুবুল রহমান, সহকারী প্রক্টর

কেন চাঁদাবাজি ও শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুবুল রহমান ৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক সময় অনেক ঘটনার কথা গণমাধ্যমে এলেও আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেন না৷ অনেক ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে অভিযোগ না পাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তা সম্ভব হয় না৷’ তাঁর দাবি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাত নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১৩টি হলের নিয়ন্ত্রণ কার্যত ছাত্রলীগের হাতে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্রসংগঠন হলে গণরুমে (একসঙ্গে অনেক ছাত্র থাকে যেসব কক্ষে) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওঠায়। তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে সংগঠনের কর্মসূচিতে যেতে হয়। না গেলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করা এবং ক্যানটিন, দোকান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ওঠানো চাঁদা ছাত্রলীগের নেতাদের একাংশের আয়ের উৎস।

ছিনতাই ও মারধর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সাড়ে ১১ মাসে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও মারধরের অন্তত ৭টি ঘটনায় নাম এসেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। এসব ঘটনায় ৬টি মামলা হয়। ছিনতাই-মারধরে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত ৯ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। এঁদের পাঁচজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

যেমন গত ১৫ জানুয়ারি রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর ও হেনস্তা করে স্বর্ণালংকার ছিনতাই করার ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাঁরা হলেন রাহুল রায় ও তানজির আরাফাত। তখন তানজিরকে পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। ৬ ফেব্রুয়ারি রাহুল ও তানজিরকে সাময়িক বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে সম্প্রতি তাঁরা আবার ছাত্রলীগে সক্রিয় হয়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১০ মে সন্ধ্যায় একটি বিপণিবিতানের বিক্রয়কর্মীকে আটকে টাকা ছিনতাই ও মারধরের ঘটনায় রাতে আটক হন ছাত্রলীগ নেতা নূর উদ্দিন আহমেদ ও আল মুনতাসির। পরদিন এ ঘটনায় হওয়া মামলায় তাঁরা কারাগারে যান। মাস দুয়েক পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে নূর উদ্দিন আবার ছাত্রলীগে সক্রিয় হয়েছেন।

বিগত সাড়ে ১১ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৫টি চাঁদাবাজির ঘটনায় নাম এসেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার ও একজনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগ।

নূর উদ্দিন আহমেদ ১৭ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মামলাটি এখনো চলমান, নিয়মিত হাজিরা দেন। তবে তিনি এখন নিজের মতো করেই রাজনীতি করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় ‘প্রলয় গ্যাং’ নামে একদল শিক্ষার্থীর একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র রয়েছে। তারা নিয়মিত ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে। এই চক্রের সদস্যদের কয়েকজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর করে নতুন করে আলোচনায় আসে প্রলয় গ্যাং।

প্রলয় গ্যাং নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২৮ মার্চ একটি আন্তহল তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদ গত ২০ নভেম্বর চক্রটির চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

চাঁদাবাজি

বিগত সাড়ে ১১ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৫টি চাঁদাবাজির ঘটনায় নাম এসেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার ও একজনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগ।

যেমন ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সামনের সড়কে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় দুটি রিকশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি রিকশার চালকের পা ভেঙে যায়। ঘটনা দেখে প্রাইভেট কারটি আটকে চালককে মারধর করেন শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরে স্বীকার করেন, সেই ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ টাকা তাঁরা রেখে দিয়েছিলেন।

পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক নাজমুল হাসান ও ফজলুল হক হল শাখার কর্মী মো. তারেকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন গাড়িটির চালক। ১২ ফেব্রুয়ারি নাজমুল ও তারেককে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাড়ে ১১ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যেই অন্তত ১৩ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হলের কক্ষ দখল, প্রভাব বিস্তার, ফুটপাতে দোকান বসানো ইত্যাদি এসব সংঘর্ষের কারণ।

সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের অন্তত ৬৩ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এসবে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ নেতাকে বহিষ্কার ও ৩ জনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় ছাত্রলীগ। তবে একটি ঘটনায়ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

৫ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এক ছাত্র ও ছাত্রীর বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দুজন আহত হন।

শৃঙ্খলাবিরোধী, নৈতিকতা-পরিপন্থী ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংগঠনের কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি প্রদর্শন করি।
সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি

হলের কক্ষ দখল নিয়ে গত ১৭ জুন গভীর রাতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল এবং মাস্টার দা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পৃথকভাবে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়ান। ওই সংঘর্ষে সূর্য সেন হলে দুই পক্ষের ১০ জন এবং শহীদুল্লাহ্ হলের ৮ জন আহত হন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গত ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিরোধী, নৈতিকতা-পরিপন্থী ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংগঠনের কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি প্রদর্শন করি।’ তিনি বলেন, সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ভবিষ্যতেও কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাঁর সাংগঠনিক নেতৃত্বের প্রক্রিয়ায় আসার কোনো সুযোগ থাকবে না।

প্রতিপক্ষের ওপর হামলা-বাধা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ১১ মাসে অন্তত ৮ বার নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে পাঁচবার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। শুধু নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ছাত্রদলের তিনজন নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে দুবার।

প্রতিপক্ষের ওপর হামলার সর্বশেষ শিকার ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। ১২ ডিসেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর তাদের ওপর দুই দফা হামলা হয়। ঘটনার শুরু সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে মেট্রোরেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতি বসানো নিয়ে। প্রতিকৃতিটির কারণে রাজু ভাস্কর্য আড়ালে চলে গিয়েছিল।

ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ বিবেচনা করে খুব কম ক্ষেত্রেই প্রশাসন সক্রিয় থাকে। দলের অনুগতদের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা থাকেই।
মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে প্রতিকৃতিটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় ছাত্রলীগকে। তবে তারা সেটা শোনেনি।

১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমাবেশ থেকে গিয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মী প্রতিকৃতিটি ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে। সেদিন রাতে রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দেয় ছাত্রলীগ।

ওই ঘটনার জেরে ১৫ ডিসেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদসহ চার নেতাকে ক্যাম্পাসে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ। ওই রাতেই ক্যাম্পাসের টিএসসি ও শামসুন নাহার হলের দেয়াল থেকে ছাত্র ইউনিয়নের দেয়াললিখন মুছে দেওয়া হয়।

প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কোনো ঘটনায় ছাত্রলীগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও পড়ুন

সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন

সাড়ে ১১ মাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত পাঁচটি। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত ৭ জন।

ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ৩ ডিসেম্বর রাতে বিজয় একাত্তর হলে টেলিভিশন দেখার কক্ষে এক ছাত্রকে মানসিক নিপীড়ন করা হয়। সেই ছাত্র অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

অতিথিকক্ষে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২২ নভেম্বর তিন ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রিফাত হাওলাদার নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। পরে প্রাধ্যক্ষ তাঁকে হলে তোলেন ও অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে দেন। কমিটি এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিবেদন দেয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ বিবেচনা করে খুব কম ক্ষেত্রেই প্রশাসন সক্রিয় থাকে। দলের অনুগতদের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা থাকেই। তিনি বলেন, ছাত্রসংগঠন রাজনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে অনেক শক্তিশালী। যে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে থাকেন, তাঁদের পদ পাওয়া বা পদে থাকার জন্য শিক্ষকেরা ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বকে ব্যবহার করেন। ফলে ছাত্রসংগঠন কোনো অন্যায় করলে তাঁরা সঠিক অবস্থান নিতে পারেন না।

আরও পড়ুন