শিক্ষার মানোন্নয়নে শাসকশ্রেণির ভূমিকা নেই: অধ্যাপক রেহমান সোবহান
সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বা শিক্ষার মানোন্নয়নে শাসকশ্রেণির কোনো ভূমিকা দেখছেন না অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, যাঁরা শাসকশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, তাঁদের সন্তান কিংবা নাতি-নাতনিরা ভালো মানের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে, করছে ও করবে।
‘বাংলাদেশে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ: অধিকতর ন্যায়পরায়ণ সমাজের পথরেখা’ শিরোনামে শনিবার রাতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাক্তন সভ্য সংঘ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিভক্ত। এই বিভক্তি দূর করতে না পারলে সামনে শিক্ষাব্যবস্থায় আরও সামাজিক সংঘাত অপেক্ষা করছে।
শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন রেহমান সোবহান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাবলিক এডুকেশন (সরকারিভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা) এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এ জন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ তিন গুণ বাড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের স্বল্প মেয়াদে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন বরাদ্দ রাখা ও বৃত্তি দেওয়ার মতো সহযোগিতা সরকারের দিক থেকে থাকতে পারে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেন তিনি।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের নেতারা বছরের পর বছর মাতৃভাষায় মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখেননি, যা পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো করেছে। এর বিপরীততে দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনটা করা যেতে পারে, যাঁরা সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চান, তাঁদের সন্তানদের বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করাতে হবে। সন্তানেরা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়লে এর মান বাড়ানোর চেষ্টা করবেন তাঁরা। তবে তিনি বলেন, এমন প্রত্যাশা তাঁর কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।
রেহমান সোবহান বলেন, শিক্ষায় নিয়ম ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে, যখন অর্থ বা পেশিশক্তির পরিবর্তে জবাবদিহি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা যাবে। দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ করতে হলে রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক সমাজ লাগবে। গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় যাত্রা দীর্ঘ, কিন্তু এই যাত্রা বাধ্যতামূলক।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত শিক্ষায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, শিক্ষা যে সবচেয়ে আনন্দময়, সবচেয়ে উপকারী এবং সমৃদ্ধির ঘটক—এই কথাটা সমাজের মধ্যে আনা যায়নি। দেশের রাজনীতিবিদদের কখনোই দেখা যায়নি যে তাঁরা চিন্তাশীল মানুষের কথা শোনেন। যে কারণে দেশের জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ ও উপদেশ রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে না।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, যার যার জায়গা থেকে খুব ক্ষুদ্র স্তরে হলেও পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। গৃহকর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য অর্থ সহযোগিতা দিয়ে এই পরিবর্তনের অংশ হওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাক্তন সভ্য সংঘের সদস্য সিরাজুল ইসলাম কাদির। আরও বক্তব্য দেন মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, অধ্যাপক এম এম আকাশ ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।