জ্বালানি নেটওয়ার্কের আত্মপ্রকাশ, সরকারকে জবাবদিহিতে ভূমিকা রাখবে

টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিতে জ্বালানিবিষয়ক নেটওয়ার্ক ‘জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (জেইটনেট-বিডি)’–এর আত্মপ্রকাশ। রাজধানীর একটি হোটেলে, ২৬ সেপ্টেম্বরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

জ্বালানি রূপান্তরের মাধ্যমে দেশে শতভাগ নবায়যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে গঠিত হয়েছে জ্বালানিবিষয়ক নেটওয়ার্ক জেটনেট-বিডি। এর মধ্য দিয়ে তারা জ্বালানি বিষয়ে সরকার চাপে রাখতে পারবে বলে মনে করছে।

৭৫টি নাগরিক সংগঠন (সিএসও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, স্থানীয় সংগঠন, জ্বালানি খাতবিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদদের নিয়ে এই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিতে গঠিত এই নেটওয়ার্ক আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ হলো জনগণের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটানো, অর্থনীতির চাহিদা মেটানো। এ চাহিদা মেটাতে না পারলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

জ্বালানি নেটওয়ার্ক সরকারকে নিয়মিত চাপে রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই ও সবুজ জ্বালানি নিশ্চিতে সুপরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজন।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, দিনের বেলায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ফৌজদারি অপরাধের শামিল। ওই সময় সূর্যের আলো ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা। এটি করা গেলে বছরে ৫০ কোটি ডলার সাশ্রয় করা যেত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী দিনে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যৎকেন্দ্র যাতে না হয় এবং বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত অবসরে (মেয়াদ শেষে বন্ধ) যায়, এ বিষয়ে সরকারকে কীভাবে পরামর্শ দেওয়া যায়, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট এমবুসো গওফিলা বলেন, সৌরবিদ্যুতের একচ্ছত্র প্রভাব থেকে সরে এসে স্থানীয় পর্যায়ে বায়োগ্যাস ও বায়োমাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরও মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।

জ্বালানি নেটওয়ার্কের উদ্বোধন শেষে ‘চাওয়া থেকে বাস্তবতা: বাংলাদেশের জ্বালানির ভবিষ্যৎ গঠন’–বিষয়ক সংলাপ ও মতবিনিময় সভায় কথা বলেন খাতের বিশেষজ্ঞরা। একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির এটি সঞ্চালনা করেন। সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতউল্লাহ, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম, সোলারিক গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক নাজনীন আক্তার। শতাধিক নাগরিক সংগঠন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, স্থানীয় সংগঠনের পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

নেটওয়ার্কে রাখা হয়েছে উপদেষ্টামণ্ডলী

জ্বালানি নেটওয়ার্কে ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক নিয়ে একটি উপদেষ্টামণ্ডলী করা হয়েছে। এতে আছেন ম তামিম, ইজাজ হোসেন, খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের প্রধান বিশ্লেষক (জ্বালানি) শফিকুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান প্রমুখ।

জ্বালানি নেটওয়ার্ক যেসব কাজ করবে

দেশে জ্বালানি সুশাসন, সাশ্রয়ী জ্বালানি, সবুজ কর্মসংস্থান, ন্যায্য ও সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে নারীদের অংশগ্রহণ, জ্বালানি দক্ষতা, জ্বালানি সংরক্ষণ, পরিবেশ ও জনপদের সুরক্ষা, ক্যাম্পেইনসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে জ্বালানি নেটওয়ার্ক। অনুষ্ঠানে নেটওয়ার্কের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন (জেট) টিমের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ।