প্রতীক নিয়ে প্রচারে বাধা দেখছেন না সিইসি, দিলেন না প্রশ্নের উত্তর
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রয়োগের সময় এখনো আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর মতে, নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর আচরণ বিধিমালা প্রযোজ্য হবে। এখন লাঙ্গল, নৌকা বা নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে প্রচার চালাতে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো বাধা নেই।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।
অবশ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে আচরণ বিধিমালা সেটা শুধু প্রার্থী নয়, রাজনৈতিক দলের জন্যও প্রযোজ্য। এটির নাম ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’।
বিধিমালাটিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তাদের পক্ষে কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না।
বিধিমালায় আরও বলা আছে, এই বিধিমালা নির্বাচন-পূর্ব সময়ে প্রযোজ্য। আর নির্বাচন-পূর্ব সময় বলতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। এর আগেই বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আচরণবিধির মূল বিষয় প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেউ প্রার্থী নন। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন, সেদিন থেকে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে।
সিইসি বলেন, ‘এর আগে যে নির্বাচনী প্রচারণা হচ্ছে, এগুলো আমাদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা নয়। এখন যদি কোনো রাজনৈতিক দল লাঙ্গল নিয়ে, নৌকা নিয়ে...ওনারা যদি প্রচারণা করেন, তাতে কোনো রকম বাধা নেই।’
সিইসি আরও বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর ইসি তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করবে। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘...মিটিং যদি উনি (প্রধানমন্ত্রী) করে থাকেন...সেটা অসুবিধাটা কোথায়? কারণ, আচরণবিধিমালা প্রয়োগের সময় তো আমাদের আসেনি।’
সিইসি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোথায় মিটিং করছেন, কী মিটিং করছেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রার্থী নন, হয়তোবা সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন...উনিও একজন প্রার্থী হবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার পর। কাজেই আইনের মূল কথা হচ্ছে, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না।’
অবশ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে সতর্ক করার নির্দেশনা দিয়ে ২২ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে ইসি।
যদি আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় শুরুর আগে আচরণবিধি প্রযোজ্য না হয়, তাহলে ইসি কীভাবে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে সতর্ক করার নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল—এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
‘নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়নি’
নির্বাচন পেছানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনাররা বলেছেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, প্রয়োজন হলে পুনঃ তফসিল (রি-শিডিউল) করা যেতে পারে। এখানে নির্বাচন পেছানোর কথা বলা হয়নি।
বিএনপি যদি ভোটে না আসে, সে ভোট পরিপূর্ণ হবে কি না, ইসিকে শতভাগ তৃপ্তি দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমি রিপ্লাই (প্রতি উত্তর) দিতে আসিনি।...বিএনপিকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, একবার নয়, দুবার নয়, পাঁচবার নয়, দশবার। এখনো বলা হয়েছে, বিএনপি যদি আসে এখনো সুযোগ [রয়েছে]। আমি আমার বক্তব্যেও বলেছিলাম সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনো সুযোগ আছে।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা সব সময় সংলাপের কথা বলেছি। সব সময় সমঝোতার কথা বলেছি। উৎসবমুখর ও অনুকূল পরিবেশের কথা বলেছি। সবার মধ্যে সমঝোতা যদি হয়, তাহলে আমাদের জন্য জিনিসটা আরও অনুকূল হয়ে ওঠে।’
সিইসি বলেন, তাঁরা এখনো আশা করেন হয়তো বিএনপি ভোটে আসতে পারে। বিএনপি এলে তা ইসির জন্য সুখকর হবে, পুরো জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। তাঁরা চান, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। তাহলে নির্বাচনটা ফলপ্রসূ হবে।
সেনাবাহিনী মোতায়নের বিষয়ে ‘আলোচনা করে সিদ্ধান্ত’
প্রশাসনে রদবদল করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, প্রশাসনে রদবদল কে কখন করেছিল? তিনি বলেন, তাঁরা নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। তবে এখতিয়ারের বাইরে যাবেন না। এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে, তা করবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার আগে-পরে বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। সে সময় তাঁদের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়নি। বর্তমান কমিশনও শুরুতে বিষয়টি আমলে নিয়েছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেখানে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ১৪টি চ্যালেঞ্জ বা বাধা চিহ্নিত করেছিল। এর দ্বিতীয়টি ছিল ‘নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন।’
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়নের বিষয়ে সিইসি আজ বলেন, এ বিষয়ে শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজন হলে ইসি চাইলে সরকার দেবে। এটি নিয়ে কোনো সংশয় নেই।