কর না কমালে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়

ইন্টারনেটফাইল ছবি: রয়টার্স

সরকার মাত্রাতিরিক্ত কর না কমালে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়। একজন গ্রাহক মোবাইলের ১০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনলে ৬০ টাকার বেশি চলে যায় সরাসরি সরকারের পকেটে। সরকার খুব সহজেই ১০ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। এ জন্য তারাও চায় না, ইন্টারনেটের দাম কমুক।

রাজধানীতে ডেইলি স্টার মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে এ কথা উঠে আসে। টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (টিপাপ) এই বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষপর্যায়ের টেলিকম কোম্পানি, ইন্টারনেট সার্ভিস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার নির্মাতা ও ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, সরকারি অতিরিক্ত করের জন্যই মোবাইল ডেটার দাম বেশি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও ২৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ২ শতাংশ সারচার্জ, ৬ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিংসহ আরও নানা সরকারি খরচ রয়েছে। এ জন্য মোবাইল ডেটার দাম দিন দিন বাড়ছে। গত ১০ বছরে কর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলেও দাবি করা হয় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে।

টিপাপের সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর বলেন, বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহারে বিশাল পার্থক্য। শহরে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, গ্রামে তার থেকে অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গড়ে শহরে একজন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ১০০ গিগাবাইট ডেটা মাসে ব্যবহার করেন, গ্রামে এর পরিমাণ গড়ে মাত্র ৬ গিগাবাইট। পাশের দেশ ভারতে গড়ে একজন মোবাইল ডেটা ব্যবহারকারী বাংলাদেশের একজন ব্যবহারকারীর চেয়ে ৩ গুণ বেশি ডেটা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, মোবাইল ডেটার দাম বেশি হওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছানোতে এর প্রভাব পড়ছে।

ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, কর ছাড়াও আরও একটি বড় বাধা এনটিটিএন লাইসেন্স ব্যবহারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দুটি কোম্পানির চাঁদাবাজি। এনটিটিএন-এর মনোপলি ব্যবসার জন্য গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেট ডেটা সরবরাহ কম খরচে করা যাচ্ছে না। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠান যেন সারা দেশে দিতে পারে, বিটিআরসিকে সেই অনুমোদন দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে গত সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন করে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর যে সম্পূরক শুল্ক (মোবাইলের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এবং ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ) আরোপ করেছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, এই মূল্যবৃদ্ধি জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা ইন্টারনেট ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের বড় হাতিয়ার।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ–বিশেষজ্ঞ বিল্ডকনের প্রধান মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার, মোবাইল অপারেটর রবির চিফ রেগুলেটরি অফিসার শাহেদুল আলম, বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, আইআইজি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম, বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবির, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।