‘কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন সমাজসংস্কারক’

সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সুলতানা কামাল
ছবি: প্রথম আলো

কবি সুফিয়া কামাল মুক্তবুদ্ধির পক্ষে ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি তাঁর সময় ও সমাজের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। নতুন প্রজন্মের তাঁকে গভীরভাবে জানা প্রয়োজন।

বরেণ্য কবি, লেখক ও নারী আন্দোলনের পুরোধা সুফিয়া কামালের ১১২তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীতে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন সমাজ নিরীক্ষক ও সমাজসংস্কারক। তিনি ছিলেন একজন প্রতিবাদমুখর নেতা, যাঁর ডাকে গণমানুষ রাস্তায় নেমে আসতেন।

মূল বক্তৃতায় কবি সুফিয়া কামালের মেয়ে ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল কবির লেখা, জীবনদর্শন তুলে ধরেন। বায়ান্ন থেকে শুরু করে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতামূলক আন্দোলনে কবির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, তিনি ছিলেন সমাজ নিরীক্ষক ও সমাজসংস্কারক।

বক্তৃতায় সুলতানা কামাল আরও বলেন, একটি লেখায় বা বক্তৃতায় কবি সুফিয়া কামালের পরিচয় তুলে ধরা কঠিন। এক মহান অভিযাত্রী তিনি। সব দিক দিয়ে অবাক করে দেওয়ার মতো মানুষ।

মাত্র ১২ বছর বয়সে কবি সুফিয়া কামালের প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় বলে জানান সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, পরে সওগাত পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোতে তিনি নিজ গুণে কলকাতায় শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছিলেন।

দৈনন্দিন জীবনে দেখা গেছে, কত সহজে তিনি নবাব বাড়ির সব অভ্যাস ছেড়ে পুকুরের সিঁড়িতে বসে কাপড় কেচেছেন, বাসন মেজেছেন, কাঠের চুলায় রান্না করে আপনজনদের হাস্যোজ্জ্বল সময় উপহার দিয়েছেন।

স্বাধীন দেশেও উল্টো পথে হাঁটার দিনগুলোতে সরকার ও রাষ্ট্র তাঁকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি বলে জানান সুলতানা কামাল।

আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, কবি সুফিয়া কামাল রাজনীতিতে বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং নারীর চেতনাকে বড় করে তোলার সৎ সাহস দেখিয়েছিলেন। এক দিকে সাহিত্যবোধ, অপর দিকে গণমানুষকে চেতনাবোধে আলোকিত করা ছিল তাঁর প্রেরণার উৎস। এই অসাধারণ কবিকে স্মরণ করে প্রজন্মকে আলোকিত করতে হবে বলেন তিনি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা ঢাকার বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেনি। তাঁর লিখিত সূচনা বক্তব্য পাঠ করে শোনান বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কবি সুফিয়া কামাল নারী জাগরণ ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসনা জাহান খানম বলেন, যে সময় মেয়েদের পড়ার সুযোগ ছিল না, সেই সময় পারিবারিক পরিবেশে পড়াশোনা করেছেন কবি সুফিয়া কামাল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দ। তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল তাঁর সময় ও সমাজের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তাঁর মতো বরেণ্য ব্যক্তিদের আরও জানার সুযোগ করে দেবে সরকার।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ইমরুল ইউসুফ।