নেশা যখন পাহাড়ের: ট্রেকিংয়ের প্রস্তুতি যেমন হওয়া দরকার

ভ্রমণপ্রেম অনেক রকমের হয়। কারও শুধু সমুদ্র দেখতে ইচ্ছা করে, কারও মন চায় কোনো একটা রিসোর্টে বসে অলস একটা বিকেল কিছু না করেই কাটিয়ে দিতে। আবার অনেকের মন নেচে ওঠে পাহাড়ের কথা শুনলে।

আকাশের কাছাকাছি পাহাড়ের সুউচ্চ সারি কল্পনা করলেই তাঁদের ভালো লাগে। অনেকে আছেন একটু এগিয়ে। তাঁরা তরতর করে পাহাড়ে উঠে যেতে ভালোবাসেন। এই ভালোবাসা নিয়ে অনেকে জয় করেছেন এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কিলিমানজারোর মতো পর্বতমালা

আপনিও কি স্বপ্ন দেখেন সুউচ্চ পর্বতমালার শিখরে উঠে বিজয়ের হাসি হাসার? তাহলে এই লেখা আপনার জন্যই। বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ট্রেকিং করা যায়, কীভাবে ট্রেকিং শুরু করবেন, আনুষঙ্গিক কী কী যোগ্যতা ও জিনিসপত্র এর জন্য দরকার, কিছুটা হলেও জানতে পারবেন।

ছেলেদের পাশাপাশি আজকাল ট্রেকিংয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন মেয়েরাও। এ বিষয়ে কথা হয় ট্রাভেল গ্রুপ ‘ভ্রমণকন্যা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্যুর কো-অর্ডিনেটর নুসরাত জাহান রিজভীর সঙ্গে। নুসরাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইদানীং অনেক মেয়ে ট্রেকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। আমাদের গ্রুপ তো বটেই, অন্যান্য সমন্বিত গ্রুপের সঙ্গেও মেয়েরা ট্রেকিংয়ে যান।’

ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই ট্রেকিং শুরু করতে হলে প্রস্তুতি কী? এ প্রসঙ্গে নুসরাত জাহান বলেন, ‘ট্রেকিং শুরু করতে হলে সবার আগে চাই শারীরিক সুস্থতা। পাহাড়, জঙ্গল বা নদী-উপত্যকার মধ্য দিয়ে যেতে হলে ফুসফুসের জোর চাই। যাঁদের হাঁটাচলার অভ্যাস নেই, বসে কাজ করেন, তাঁরা অন্তত মাস দুয়েক আগে থেকেই হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, জগিং শুরু করে দিন। সেই সঙ্গে হার্টের ব্যায়াম, ওজন কমানোর ব্যায়ামও অভ্যাস করতে হবে।’

নুসরাত জানান, পায়ের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে। এর জন্য সিঁড়ি ভাঙাও জরুরি। ঠিক কতক্ষণ দম ধরে রাখতে পারছেন, কখন হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, তার হিসাব রাখুন। যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে শ্বাসের ব্যায়াম অভ্যাস করতে হবে অনেক আগে থেকেই। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের থেকে তা শিখে নিতে হবে। তবে যদি হাঁটুতে ব্যথা থাকে বা ফুসফুসের কোনো রোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

বাংলাদেশে ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য কেওক্রাডং, বগালেক, তাজিংডং, চিম্বুক রেঞ্জের ক্রিসতং, রুংরাং, থানচির রেমাক্রি, তিন্দু, নাফাখুমসহ বহু স্থান। যেখানে ভ্রমণকারীরা দল বেঁধে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং করতে যান। রেমাক্রি খালের তীরে অনেক স্থানে ক্যাম্পিং করা যায়। পুকুরপাড়া বা রাইক্ষ্যং লেক, তিনমাথা, রোয়াংছড়ির সিপ্পি আরসুয়াংসহ আরও অনেক জনপ্রিয় স্থান রয়েছে। দেশের বাইরে ট্রেকিং করতে চাইলে দেশের এই জায়গাগুলোয় গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করাটাই ভালো।

ট্রেকিংয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের সুযোগ বিষয়ে নুসরাত জাহান রিজভী বলেন, ‘ট্রেকিংয়ের বিষয়ে দেশেই অনেক জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। “ভ্রমণকন্যা অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব” নামে আমাদেরও একটা ক্লাব আছে। সেখানে একজন ইনস্ট্রাক্টর মেয়েদের ট্রেকিংসহ বিভিন্ন শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। যাতে নতুন কেউ ট্রেকিংয়ে গেলে আগে থেকেই প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।’