পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা

গাছ রক্ষার দাবিতে ২১ দিন ধরে রাজধানীর পান্থকুঞ্জে অবস্থানরত পরিবেশকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আজ ২ জানুয়ারি, কারওয়ানবাজার–সংলগ্ন পান্থকুঞ্জছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কে ২১ দিন ধরে অবস্থান করা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ হামলার ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন রাজধানীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর কর্মীরা বলেছেন, পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), গ্রিন ভয়েসসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হামলা করেছেন।

হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় পান্থকুঞ্জে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করবে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে এই আন্দোলনের কর্মী নয়ন সরকার জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাপা, গ্রিন ভয়েস কেন্দ্রীয় কমিটি তেজগাঁও কলেজ শাখা, আরডিআরসি, পরিজা, গোলাপবাগ মাঠ রক্ষা আন্দোলন, জুরাইন ফুটবল একাডেমি, জাগরণী ক্রীড়া চক্র ও পরিবেশ বার্তার কর্মীরা রাজধানীর ফার্মগেটে আনোয়ারা উদ্যানের সামনে সমাবেশ শুরু করেন। তাঁদের দাবি, আনোয়ারা উদ্যান, কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্ক, গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ পার্ক এবং গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যান সবার ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হোক। সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা পান্থকুঞ্জের উদ্দেশে লংমার্চ নিয়ে যাত্রা করেন।

কারওয়ান বাজার–সংলগ্ন পান্থকুঞ্জে লংমার্চ পৌঁছায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। সেখানে লংমার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। ওই সময় পান্থকুঞ্জ পার্কে ২১ দিন ধরে অবস্থান করা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব হ্যান্ডমাইক নিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি লংমার্চকারীদের কাছে জানতে চান, তাঁরা এত দিন কোথায় ছিলেন? এত দিন পরে কিসের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন?

হ্যান্ডমাইকে রাজিবের এসব কথাবার্তার একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। তখন আমিরুল রাজিব বলেন, কর্মসূচি পালনের জন্য বাপা ও গ্রিন ভয়েস টাকা দিয়ে লোকজন ভাড়া করে এনেছে।

এরপরই গ্রিন ভয়েসের কর্মীরা আমিরুল রাজিবসহ সেখানে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের ধাক্কা দিতে শুরু করেন এবং একপর্যায়ে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এভাবে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে কয়েক দফায় পান্থকুঞ্জে অবস্থানকারীদের ওপর লংমার্চকারীরা হামলা চালান।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যদের অভিযোগ, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এবং গ্রিন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক হুমায়ূন কবির সুমন হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের অন্তত সাতজনকে মারধর করা হয়। গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্য ফয়সালের মাথায় ও চোয়ালে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁকে গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পান্থকুঞ্জ পার্কে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার না যাওয়ার দাবিতে ২১ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময়ে বাপা থেকে কেউ সেখানে যাননি। তা ছাড়া ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যান আগামী ২৫ মার্চ খুলে দেওয়া হবে বলে সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে কেন তাদের এই আন্দোলন?

বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসেছিলাম। ভাড়া করে লোক এনেছি, ছবি তুলতে এসেছি—এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তাঁরা শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়েছেন। আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করতে তাঁরা এমনটি করেছেন।’