তেলচালিত কেন্দ্র না চালালে লোডশেডিং হবে গ্রীষ্মে: বিইপপা
সামনের গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিইপপা)। তারা বলছে, বকেয়া শোধ না করা হলে তেলচালিত কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে না। তেলচালিত কেন্দ্র না চালালে আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে গ্রীষ্মে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বিইপপাএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা। টাকার অভাবে অনেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারছে না।
বিইপপা নেতারা বলেছেন, চুক্তি অনুসারে ৩০ দিনের বেশি বকেয়া রাখার সুযোগ নেই। অথচ ১৮০ দিনের বেশি বকেয়া রাখছে পিডিবি। যৌক্তিক পর্যায়ে বিল পরিশোধ করা না হলে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো কঠিন হবে। তবে বিল পরিশোধে কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি তারা।
নিবন্ধে বলা হয়, মার্চ থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে। কয়লা থেকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় উৎপাদন করা হলেও আসবে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। আমদানি থেকে আসতে পারে ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট। এ সময় ৭৫ শতাংশ সক্ষমতা কাজে লাগালে তেল থেকে ৪ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। তাই তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে হলে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান তাঁরা। বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে খাদ্যঘাটতি তৈরি হতে পারে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দরপত্র ছাড়া একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় একটি কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে উল্লেখিত ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) পর্যালোচনায় আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে পরিকল্পনা তৈরি করছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীরা।
কয়েকটি দেশের বিদ্যুতের দাম নিয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছে বিইপপাএ। নিবন্ধে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কার বিদ্যুতের দাম উল্লেখ করেছে তারা। এতে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে কম। বিইপপা কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোক্তার কাছ থেকে সঠিক দাম আদায় করা হয়নি। এ কারণে ভর্তুকির চাপ বেশি। এখানে দক্ষতার ঘাটতি নেই।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিইপপা সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত। আর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ইমরান করিম। এরপর তাঁরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ খাতে লুটপাটের বিষয়ে তাঁরা বলেন, এটি সরকার তদন্ত করে দেখতে পারে। যাঁরা বাড়তি দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে দর–কষাকষি করে চুক্তি সংশোধন করতে পারে, যা দুই পক্ষের সমঝোতার বিষয়। এতে সংগঠনের কোনো আপত্তি নেই।
ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমনের কারণে তাঁদের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। তবে একই কারণে কেন্দ্রভাড়া থেকে কত টাকা লাভ পেয়েছেন, তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি তাঁরা। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে তাঁদের মতামত জানতে চাইলেও তা পাওয়া যায়নি।
ইমরান করিম বলেন, প্রাথমিক জ্বালানিতে উচ্চ করারোপ করা একটি ভয়ংকর বিষয়। ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানে এটি দেখা যায় না। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেয়। একদিকে কর নিয়ে খরচ বাড়ায়, আরেক দিকে ভর্তুকি দেয়—এটা যৌক্তিক নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল হাসনাত বলেন, সরকারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। বকেয়ার বিষয়ে তাঁদের পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তার দায় বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া যাবে না।