গণমাধ্যমকে ‘শায়েস্তা’ করা বন্ধ করুন, শামসুজ্জামানকে মুক্তি দিন: টিআইবি
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তাঁর বাসা থেকে গভীর রাতে তুলে নেওয়া ও ৩০ ঘণ্টা পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবি মনে করে, এই ঘটনা একজন সাংবাদিক ও দেশের একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের এবং প্রয়োজনে শায়েস্তা করার ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করেছে।
শামসুজ্জামানকে দৃশ্যত অবৈধভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর তাঁকে আদালতে উপস্থাপন এবং মাঝের সময়ে নিখোঁজ থাকার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংবাদকর্মী হিসেবে তো বটেই, একজন নাগরিক হিসেবেও শামসুজ্জামানের সাংবিধানিক অধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেননা, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যদি আইনগতভাবে আটক করা হয়, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা করতে পরিষ্কারভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যে মামলায় আটক দেখিয়ে তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছে, সেটিও করা হয়েছে তুলে নেওয়ার ২০ ঘণ্টা পর।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো প্রতিবেদনের ভুল বা অসংগতি থাকলে কেউ তা নিয়ে সংক্ষুব্ধ হতে পারেন, এমনকি তা নিরসনের জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল আইন রয়েছে ও বিদ্যমান সেই আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকার কথা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত দুই দিনে আরও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এই কালাকানুন তৈরির সময় থেকেই টিআইবি সব সময় আইনটির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছে। এমনকি আইনমন্ত্রীও এই আইনের অপব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তারপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অ-জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ার কারণে অপরাধ প্রমাণিত না হলেও অভিযুক্তকে ‘শায়েস্তা’ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তা করাও হচ্ছে।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক ২০২২–এর উল্লেখ করে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২–তে, যা কিনা আফগানিস্তানের (১৫৬) চেয়েও নিচে। এই অবস্থান নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও শাসকদলের মাধ্যমে তার যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের প্রতিফলন।