আগুন–সন্ত্রাসের বিষয়ে সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
আন্দোলনের নামে দেশে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন–সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যাতে কেউ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পঞ্চম ধাপে ৮টি বিভাগের ৩৪টি জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নতুনগুলোসহ এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৫৬৪টির মধ্যে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে কেউ ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন–সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে না পারে।’
গতকাল শনিবার বেশ কয়েকটি বাসে বিএনপির অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের চরিত্র আপনারা ভালো করেই জানেন, এরা সন্ত্রাসী। গতকালও তারা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। তারা ২০১৩-১৪ সালেও চলন্ত বাস, ট্রেন ও লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ গতকাল তাদের (বিএনপি) ভয়ংকর চেহারা দেখেছে, কারণ তারা আবারও আগুন–সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ইসলামের নামে রাজনীতি করেছে, কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাদের কোনো অবদানও নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং তাবলিগ জামাতের জন্য টঙ্গীতে জমি বরাদ্দ করে সারা দেশে ইসলামের সত্য বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে হজের পর টঙ্গীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী যাতে স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে পারে, সে জন্য বঙ্গবন্ধু হিজবুল বাহার জাহাজ কিনেছিলেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার আন্তরিক উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্যপদ লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে সমাজে ইসলামের প্রকৃত চেতনা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকার প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামা, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নামাজের সময় মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় সামাজিক হুমকি সম্পর্কে ওয়াজ করতে বলেন, যেন যুবকেরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিশাপ থেকে দূরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের এমনভাবে ওয়াজ করা উচিত, যাতে যুবকেরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের সাথে জড়িত না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল এবং আজ ৩০ জুলাই-প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপে প্রতিটিতে ৫০টি করে মসজিদ উদ্বোধন করেন।
অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।
এ ছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামি দাওয়াতের জন্য কনফারেন্স রুম, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে মসজিদে।
মডেল মসজিদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যাতে ইসলামের মর্মবাণী বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারে, তার জন্য সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে।
নতুন চালু হওয়া ৫০টি মসজিদের মধ্যে রয়েছে মাগুরা জেলা মডেল মসজিদ এবং ৪৯টি উপজেলা মডেল মসজিদ।