রেলওয়ের কর্মীদের কর্মবিরতির ডাক
দাবি আদায়ে সারা দেশে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পর ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার কথা।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরোনোদের চেয়ে আরও কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর থেকেই নতুন ও পুরোনো রানিং স্টাফরা ব্রিটিশ আমল থেকে চালু এ সুবিধা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছেন।
সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলামের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তু আন্দোলরত কর্মীরা তাতে অংশ নেননি। সন্ধ্যায় কমলাপুর স্টেশনে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন, কিন্তু তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় থাকেন।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সচিবের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিলে প্রয়োজনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গেও সাক্ষাতের একটি সুযোগ ছিল, কিন্তু রানিং স্টাফদের প্রতিনিধিরা এড়িয়ে গেছেন।
গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরের পর যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা পুরোনোদের চেয়ে কম সুবিধা পাবেন, এটা জেনেই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। আর পুরোনোদের সুবিধা কমানোর বিষয়টি তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত। ফলে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রানিং স্টাফদের দাবি সুরাহা করা সম্ভব নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। রানিং স্টাফদের অপেক্ষা করতে হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মন্ত্রণালয় আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। বিষয়টির সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় যুক্ত। ফলে দাবিদাওয়ার বিষয়ে সময় দিতে হবে। ট্রেন বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।