সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সব পদে আওয়ামী লীগপন্থীদের জয়
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে (২০২৩-২৪) সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সবকটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদক পদে পুননির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মো. আবদুন নূর।
সমিতির এবারের নির্বাচনে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ হয়। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের ভোট গ্রহণ শেষে রাত দেড়টার পর ফলাফল ঘোষণা শুরু করে সোয়া দুইটার দিকে শেষ হয় বলে জানান উপস্থিত বেশ কয়েকজন আইনজীবী। সমিতির দক্ষিণ হলে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ফলাফল ঘোষণা করেন।
নির্বাচিত হলেন যারা
সমিতির নির্বাচনে বরাবরই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে দুটি প্যানেলের মধ্যে। একটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা হিসেবে পরিচিত) মনোনীত প্যানেল। অন্যটি, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল হিসেবে পরিচিত)।
ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, সাদা প্যানেলের প্রার্থী মোমতাজ উদ্দিন ফকির তিন হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে সভাপতি হিসেবে পুননির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ২৯৩ ভোট পেয়েছেন।
সাদা প্যানেলের প্রার্থী মো. আবদুন নূর তিন হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে সম্পাদক পদে পুর্ননির্বাচিত হয়েছেন। এই পদে নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস ৩০৯ ভোট পেয়েছেন।
সহসভাপতির দুটি পদে সাদা প্যানেল থেকে মো. আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা জয়ী হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে একই প্যানেলের এম. মাসুদ আলম চৌধুরী জয়ী হয়েছেন। সহসম্পাদক হিসেবে জয় পেয়েছেন এ বি এম নূর-এ-আলম ও মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ।
সদস্য সাতটি পদে সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ (রুদ্র), মনিরুজ্জামান রানা, শফিক রায়হান শাওন, মো. সাফায়েত হোসেন (সজীব), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. নাজমুল হুদা ও সুভাষ চন্দ্র দাস।
গত নির্বাচনে (২০২২-২৩) সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা। অপর সাতটি পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
ভোট ঘিরে উত্তেজনা
নির্বাচন শুরুর এক দিন আগে গত সোমবার নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। দুই পক্ষই ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাঁকে আহ্বায়ক হিসেবে মেনে নিয়েছিল। মনসুরুল হক পদত্যাগ করলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনার উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। এরপর সেদিন বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী মনোনীত আহ্বায়ক মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে গেলে এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ নিয়ে হইচই, হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এর রেশ ভোটের প্রথম দিনে অর্থাৎ গত বুধবার সকাল থেকেই দেখা যায়। নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত কোন উপকমিটির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে—এমন প্রশ্নে তর্কে জড়ায় দুই পক্ষ। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ গিয়ে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে সমিতির মিলনায়তন (ভোটকেন্দ্র) থেকে বের করে দেয়। পুলিশের হামলায় বুধবার আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এরপর দুপক্ষের মিছিল, শ্লোগান, ধাক্কাধাক্কি ও পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অংশগ্রহণ ছাড়াই ভোট গ্রহণ চলে।
দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবারও দিনভর ছিল উত্তেজনা। সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণসহ ভোটারদের প্রবেশের জন্য গড়া ভোটের শামিয়ানার সামনে ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে মিছিল-শ্লোগান দেয়। শামিয়ানার সামনে দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত দুদফা ধাক্কাধাক্কি হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন।
বিগত বছরগুলোতে নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের প্রবেশ পথের সামনে দুপক্ষের প্রার্থীদের উপস্থিত থাকতে দেখা যেতো। প্রার্থী বা তার সমর্থকেরা ব্যালট নম্বর উল্লেখিত প্রার্থীর পরিচিতি কার্ড ভোটারদের হাতে তুলে দিতেন। তবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের হাতে কার্ড তুলে দিতে দেখা গেলেও বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে এ-সংক্রান্ত কার্ড তুলে দিতে দেখা যায়নি।