ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা চলছে সিএমএইচে
আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সিএমএইচে ৩২০টি শয্যা প্রস্তুত। আহতরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ৩২০টি শয্যা প্রস্তুত রেখেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ। আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা পাবেন সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। শুধু শিক্ষার্থী নন, আহত যেকোনো নাগরিক এখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
সাধারণত সামরিক বাহিনীর সদস্য বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সিএমএইচে চিকিৎসার সুযোগ পান। বিশেষ কোনো নাগরিক বা জটিল কোনো পরিস্থিতির রোগীকেও এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক আন্দোলন ঘিরে আহত বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতালটি। ১ হাজার ৬৫০ শয্যার এ হাসপাতালে সাধারণ সব ধরনের চিকিৎসার পাশাপাশি ১৪টি সেন্টারে বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সিএমএইচের ট্রমা ও বার্ন সেন্টারে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে আন্দোলনে আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, সারি সারি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন রোগীকে দেখা গেল। তাঁদের একজন রাজমিস্ত্রি। বাকিরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১১৩ জন আহত ব্যক্তি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন, তিনি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গতকাল মোট ১৪ জন আহত ব্যক্তি এখানে ভর্তি ছিলেন।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতির এই ক্রান্তিকালে সেনাপ্রধানের নির্দেশে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে চিকিৎসা, ওষুধপত্র, খাবার—সবই বিনা মূল্যে দেওয়া হবে। যাঁদের দরকার, তাঁদের আর্থিক সহায়তার কথাও সেনাপ্রধান বলেছেন।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর আরও বলেন, পুরোনো ক্ষত আছে, ক্ষতজনিত সংক্রমণ হয়েছে, স্কিন গ্রাফটিং করা প্রয়োজন বা দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করতে হবে—সেসব রোগীকে সিএমএইচে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি অনেকে অপুষ্টির শিকার। আমরা সেই ব্যাপারেও গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রোগীরা কী বলেন
মো. সিজানের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিনে। তার বাবা গরু বিক্রির ব্যবসা করেন। সে শম্ভুপুর মাধ্যমিক স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে ২ আগস্ট লঞ্চে ঢাকা আসে। ছিল যাত্রাবাড়ীতে এক বন্ধুর বাসায়।
মো. সিজান বলে, ৫ আগস্ট বেলা দুইটা-আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ীতে তার হাতে ও বুকে গুলি লাগে। ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা রাস্তায় ছটফট করতে থাকে। বন্ধুরা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। সিজান বলে, ওখানে পরিবেশ ভালো ছিল না। ঠিকমতো যত্ন হতো না, ড্রেসিং হতো না, ইনফেকশন হয়ে গেছে। ভালো চিকিৎসার জন্য তাই এখানে আসা।
গতকাল সিজানের মতো বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে সিএমএইচের সেবার প্রশংসা করেছেন। হাসপাতালটি পরিষ্কার, সবাই রোগীর খোঁজখবর নেয়, লোকজনের ভিড় কম।
সিজানের পাশের শয্যায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি মো. বেল্লাল শেখ। ৪ আগস্ট গাজীপুরের সফিপুরে আনসার একাডেমির সামনে পুলিশ তাঁকে বেদম পেটায়। তাঁর দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। প্রথমে তাঁর চিকিৎসা হয় সফিপুর জেনারেল হাসপাতালে। মো. বেল্লাল শেখ বলেন, মার খেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন। এখন মাথা ঠিক রেখে কথা বলতে পারেন না। এই হাসপাতালে আগে এলে এত দিন সুস্থ হয়ে যেতেন বলে তাঁর ধারণা।
দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের জন্য মো. আজহারুল ইসলামকে সিএমএইচে এনেছেন তাঁর বাবা। আজহারুল টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। ১৮ জুলাই উত্তরা এলাকায় সংঘর্ষের সময় তাঁর ঘাড়ে গুলি লাগে। প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ১২ দিন ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখান থেকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একটি অস্ত্রোপচার হয়। এখনো আজহারুল স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। তাঁর স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালে তাঁকে এই হাসপাতালে আনা হয়েছে দ্বিতীয় একটি অস্ত্রোপচার করার জন্য।
রোগীরা কীভাবে আসবেন
মো. আজহারুল ইসলামের বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। সিএমএইচে চিকিৎসার সুযোগের ব্যাপারে গণমাধ্যম থেকে জেনেছেন। সেখানে কয়েকটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করে তিনি এসেছেন।
হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়েছি। তাতে যোগাযোগ করে যেকোনো রোগী এখানে আসতে পারেন। তবে যে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে, সেই হাসপাতালের একটি রেফারেন্স থাকলে সুবিধা হয়।’
এই হাসপাতালে কিছুটা কড়াকড়ি নিয়মকানুন আছে। এখানে রোগীর সঙ্গে কোনো স্বজনকে থাকতে দেওয়া হয় না। তবে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন স্বজনেরা।
যোগাযোগের ফোন নম্বর
জরুরি চিকিৎসাসেবা গ্রহণে আগ্রহী চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ সিএমএইচের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছে সেনাবাহিনী।
ঢাকা অঞ্চল: ০১৭৬৯০৫১৬৫২, ০১৭৬৯০৫১৬৫৩, ০১৭৬৯০৫১৬৫৪, ০১৭৬৯০৫১৬৫৭, ০১৭৬৯০৫১৬৫৮
সাভার অঞ্চল: ০১৭৬৯০৯২০৭০, ০১৭৬৯০৯২০৫৮
বরিশাল অঞ্চল: ০১৭৬৯০৭২০৭২, ০১৭৬৯০৭২০৫৮
কক্সবাজার অঞ্চল: ০১৭৬৯১০২০৭০, ০১৭৬৯১০২০৫৮
বগুড়া অঞ্চল: ০১৭৬৯১১২০৭০, ০১৭৬৯১১২০৫৮
সিলেট অঞ্চল: ০১৭৬৯১৭২০৭০, ০১৭৬৯১৭২০৫৮
ঘাটাইল অঞ্চল: ০১৭৬৯১৯২০৭০, ০১৭৬৯১৯২০৫৮
চট্টগ্রাম অঞ্চল: ০১৭৬৯২৪২০৭২, ০১৭৬৯২৪২০৫৮
কুমিল্লা অঞ্চল: ০১৭৬৯৩৩২০৭০, ০১৭৬৯৩৩২০৫৮
যশোর অঞ্চল: ০১৭৬৯৫৫২০৭০, ০১৭৬৯৫৫২০৫৮
রংপুর অঞ্চল: ০১৭৬৯৬৬২০৭০, ০১৭৬৯৬৬২০৫৮