কেমন আছেন?
হায়দার আলী: ভালো আছি।
সম্প্রতি আপনার বিএ পাসের সনদ হাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর কী হলো?
হায়দার আলী: সম্প্রতি আমি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিরোজপুরের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে সনদ আনার জন্য গেলে এক কর্মকর্তা ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অনেকে আমাকে দেখতে আসেন। সাংবাদিকেরা আসেন। গ্রামবাসী এখন আমাকে সম্মানের চোখে দেখেন।
আপনি পাস করেছেন কবে?
হায়দার আলী: আমি পাস করেছি ২০২০ সালে। তবে পাসের খবর জানতে পারি এক মাস আগে।
পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক বছর পর আবার শুরু করলেন কীভাবে?
হায়দার আলী: ১৯৯৪ সালে আমি এসএসসি পাস করি। অভাবের কারণে পড়াশোনা আর করা হয়নি। এরপর রিকশা চালিয়েছি ও পোশাক কারখানায় চাকরি করেছি। ২০০৬ সালে গ্রামে ফিরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ানো (প্রাইভেট) শুরু করলাম। এক ব্যক্তি আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন। বলেছিলেন এসএসসি পাস করে লেখাপড়ার কী বোঝো। এরপর আমি প্রতিজ্ঞা করলাম পড়াশোনা করে স্নাতক পাস করব। ২০১৩ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হলাম। এইচএসসি পাস করার পর বিএ পাস করলাম।
বিএ পাসের খবরটি এত পর কার কাছ থেকে জানলেন?
হায়দার আলী: এক মাস আগে এক শিক্ষক জানিয়েছেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিরোজপুরের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে গিয়ে পাসের সনদ হাতে পাই।
বিএ পাসের সনদ পেয়ে কেমন লেগেছিল?
হায়দার আলী: মনে হয়েছিল বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছিল।
ভ্যান চালানোর পর পড়াশোনা কখন করতেন?
হায়দার আলী: সারা দিন ভ্যান চালিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যেত। এরপর রাতের খাবার খেয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম।
পড়াশোনা করতে কোনো সমস্যা হয়েছে?
হায়দার আলী: না। আমি এসএসসি পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র ছিলাম। এ কারণে পাঠ্যবই পড়তে আমার শিক্ষকের তেমন কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়নি।
পরিবারে কে কে আছে?
হায়দার আলী: তিন মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী ও মা।
ছেলে-মেয়েরা কী করে?
হায়দার আলী: বড় মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। মেজ মেয়ে নবম ও ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।
ছেলে-মেয়েরা আপনার পড়াশোনায় কোনো সহায়তা করেছে?
হায়দার আলী: ওদের আমি পড়িয়েছি। প্রাইভেট শিক্ষক দিতে পারিনি।
ভ্যান চালিয়ে কত টাকা আয় হয়?
হায়দার আলী: কোনো ঠিক নেই। কখনো ২০০ টাকা, কখনো ৫০০ টাকা। গ্রামে তো বেশি আয়ের সুযোগ নেই।
এই টাকায় সংসার চলে?
হায়দার আলী: নুন আনতে পানতা ফুরায়। তবু চলে তো যেতে হয়।
এখন আপনার ইচ্ছা কী?
হায়দার আলী: এমএ পাস করতে চাই। কম্পিউটার চালানোর প্রশিক্ষণও নিতে চাই। চাকরিও করতে চাচ্ছি।
কী ধরনের চাকরি?
হায়দার আলী: যেকোনো ধরনের চাকরি হলেই চলবে।