কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়ার ঘাটপাড়ার যুবক আবদুল্লাহ আল মামুনকে (৩০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুঠোফোন থেকে প্রেমিকার ছবি ও ভিডিও ফেরত না পেয়ে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তাঁর বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার মো. শাহেদ হোসেন (৩০)। আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মামুন হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরেন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান। তিনি বলেন, প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মুঠোফোন থেকে ফেরত না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ শাহেদ এক লাখ টাকায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগ দিয়ে মামুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তাঁদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে।
র্যাব জানায়, হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে মামুনের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের খাদেমের পাড়া গ্রামের রেললাইনের পূর্ব পাশে ফেলে রাখা হয়। নিহত মামুন খুরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে। আর মো. শাহেদ হোসেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার মাছুয়াখালী সিকদারপাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে। তবে শাহেদ থাকেন কক্সবাজার শহরে।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত রোববার সকাল ১০টার দিকে রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের খাদেমের পাড়ায় রেললাইনের পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। এরপর রামু থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে রামু থানায় নিহত মামুনের ছোট ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে র্যাব অভিযান চালিয়ে শাহেদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মামুনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সম্ভবত শ্বাসরোধ করে তাঁকে (মামুন) হত্যা করে হাত-পা বেঁধে লাশ রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহেদ হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে এনে তাঁকে (শাহেদ) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ ও র্যাব জানায়, নিহত মামুন পেশায় ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর ব্যবসায়ী। কক্সবাজার শহরতলির লিংকরোড বাজারে ভিশন ইলেকট্রনিকস নামের একটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে তিনিসহ তিনজনের। এই বিক্রয়কেন্দ্র নিহত মামুন, তাঁর বন্ধু শাহেদ হোসেন (গ্রেপ্তার) এবং শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের যৌথ শেয়ার রয়েছে। ব্যবসা চলত তিনজনের উপস্থিতিতে।
যেভাবে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান বলেন, ঈদগাঁও উপজেলার এক মেয়ের সঙ্গে শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তাঁরা দুজনেই ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। একসময় মেয়েটির সঙ্গে শাহেদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মেয়েটি শাহেদের মুঠোফোন থেকে ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলতে তাগাদা দিতে থাকেন, তা-ও মেয়েটির উপস্থিতিতে মুছে ফেলতে হবে। তাতে রাজি হন শাহেদ। কিন্তু প্রেমিকার সামনে গিয়ে সেই ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলার আগে তা সংরক্ষণের জন্য বন্ধু আবদুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোনে প্রেরণ করেন। এরপর প্রেমিকার সামনে গিয়ে ওই ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলেন শাহেদ।
পরে শাহেদ প্রেমিকার ছবি ও ভিডিও ফেরত চাইলে তা দিতে অনীহা প্রকাশ করতে থাকেন আবদুল্লাহ আল মামুন। নানা চেষ্টার পরও ছবি ও ভিডিও ফেরত না পেয়ে ক্ষুব্ধ শাহেদ মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ জুলাই রাত আনুমানিক আটটার দিকে আবদুল্লাহ-আল-মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে কল নিয়ে শাহেদ হোসেন কক্সবাজার শহরের বাজারছড়া বাজারে আসতে বলেন। তখন মামুন তাঁদের বিক্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। শাহেদের কথামতো মামুন মোটরসাইকেল নিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে বাহারছড়া বাজারে পৌঁছান। কিছুক্ষণ পর মামুনের মোটরসাইকেলের পেছনে বসেন শাহেদ। তারপর দুজন রওনা দেন ঈদগাঁও উপজেলার কালিরছড়া বাজারের দিকে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসী শাহীন প্রকাশ লালু ডাকাতের লোকজন মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। এরপর পরিকল্পনামতো ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা মামুনের কাছ থেকে মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদের হাতে তুলে দেন। এরপর শাহেদ মোটরসাইকেল নিয়ে কক্সবাজার ফিরে আসেন। সন্ত্রাসীরা মামুনকে হত্যা করে রশি দিয়ে হাত–পা বেঁধে মরদেহ রেললাইনের পাশে ফেলে রাখে। গভীর রাতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা শাহেদের মুঠোফোনে (ইমো) কল দিয়ে বলেন, ‘খেলা শেষ’।