আইসিটির সূচকে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ
আইসিটির অর্থবহ সংযোগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগোলেও সর্বজনীন সংযোগে ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ।
দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) সূচকগুলোয় সমমানের অর্থনীতির দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সূচকে অগ্রগতির বৈশ্বিক যে গড়, তাতেও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। আইসিটির অর্থবহ সংযোগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগোলেও সর্বজনীন সংযোগে ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) গত ডিসেম্বেরে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ২০২৩ প্রকাশ করে। তাতে বাংলাদেশসহ ১৬৯টি দেশের আইসিটি পরিষেবার অগগ্রতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
আইটিইউ ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই আইডিআই প্রকাশ করে আসছিল। ২০১৮ সাল থেকে তারা আর এটা প্রকাশ করেনি। পরে ২০২১ সালে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ইনডেক্সে ৩৩টি দেশ সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০–এর মধ্যে স্কোর পেয়েছে। ৪৭টি দেশ ৮০ থেকে ৯০ স্কোর করতে পেরেছে। এবারের গড় স্কোর ৭২ দশমিক ৮। বাংলাদেশের স্কোর হচ্ছে ৬১ দশমিক ১, যা গড় স্কোরের চেয়ে কম।
কাছাকাছি অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। শ্রীলঙ্কার স্কোর ৬৯ দশমিক ৯, ভুটানের স্কোর ৭৬ দশমিক ৫, ভিয়েতনামের ৮০ দশমিক ৬, মালদ্বীপের ৭৯ এবং ইন্দোনেশিয়ার স্কোর ৮০ দশমিক ১। প্রতিবেদনটিতে ভারতের তথ্য নেই।
আইডিআই ইনডেক্সে মূলত ‘সর্বজনীন সংযোগ’ ও ‘অর্থবহ সংযোগ’—এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন সংযোগ বলতে মানুষ, পরিবার, কমিউনিটি ও ব্যবসা সংযুক্ত রয়েছে। যে কেউ তাঁদের শহর বা গ্রামীণ অবস্থান, লিঙ্গ, শিক্ষার অবস্থাননির্বিশেষে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন। অর্থাৎ মানুষ সমাজে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, তাঁরা নিজেদের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত রাখতে পারেন। সর্বজনীন সংযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ।
অর্থবহ সংযোগের জন্য উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন, যা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সংযোগ নিশ্চিত করে। এর সঙ্গে আরও রয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রযুক্তি ও আইসিটি পরিষেবা গ্রহণের সক্ষমতা, ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন প্রযুক্তিপণ্য, ইন্টারনেটের অর্থপূর্ণ ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইন্টারনেট। অর্থবহ সংযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৮৩।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রায় অর্ধেক দেশ সর্বজনীন সংযোগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যদিও বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অফলাইনে রয়ে গেছেন। এমনকি নামমাত্র অনলাইন জনসংখ্যার মধ্যেও অনেকেই অর্থপূর্ণভাবে সংযুক্ত নন। প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ পুরোপুরিই মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের বাইরে।
আইডিআই সূচকে আরও ১০টি উপাদানকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যেখানে ১০টি উপাদানের ৮টিতেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। এমনকি নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলোর যে গড় সূচক, সেখানেও বাংলাদেশ সাতটিতে পিছিয়ে।
উপাদানগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, মোবাইল ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশন (জিবি), ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশনে (জিবি) বাংলাদেশ গড় বৈশ্বিক গড় সূচকের চেয়ে পিছিয়ে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ আয়ের মাত্র দুই শতাংশ ব্যবহার করে মোবাইল ডেটা, ভয়েস ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে। এ ছাড়া মুঠোফোন মালিকানার পরিমাণ ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ শুধু থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্কের কাভারেজে এগিয়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইটিউইর নির্দেশকগুলো মূলত অবকাঠামো ও নেটওয়ার্ক সংযোগভিত্তিক। আর অর্থবহ সংযোগে বাংলাদেশে এগিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক কাভারেজ। বাংলাদেশ অবকাঠামোতে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এসব অবকাঠামো ব্যবহার করে আইসিটির মূলত যে অর্থপূর্ণ ব্যবহার, তাতে বাংলাদেশ এগোয়নি। আইসিটি রপ্তানি বাড়ানো, দক্ষ লোক তৈরি করা, বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবহার ও অনলাইন নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় এগোতে হবে।