জনগণের প্রত্যাশা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: আইসিজি

  • সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।

  • দুর্নীতি মোকাবিলা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি।

  • সংস্কার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ।

  • দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থের অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া উচিত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ নয় বলে উল্লেখ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। বৈশ্বিক এ সংস্থা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত প্রতিরোধে কাজ করে এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে। মারাত্মক ধরনের সংঘাতে আগাম সতর্কতা দিয়ে থাকে আইসিজি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আইসিজি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

আইসিজির প্রতিবেদনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নানা সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আইসিজি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ফাইল ছবি: পিআইডি

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার কর্মসূচির দিকে নজর দিতে চাইলে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ বড় পরিসরে মাঠে না থাকায় বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। তবে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা সংস্কারের জন্য ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের সময় দিতে চায়।

তবে বিএনপির অনেকেই নির্বাচনী প্রচার চালাতে আগ্রহী। কারণ, আগামী নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে। নিজেদের দাবি পূরণে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। অতীতে দাবি পূরণে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ কৌশল নিয়েছে।

বিএনপিকে ঠেকাতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই প্রধান সমর্থক—শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনী। জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের পর বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদের উত্থান হয়। আবার শেখ হাসিনা হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি, তার একটি সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী গত ৪ আগস্ট হাসিনার দেওয়া কারফিউ কার্যকর না করার ফলে তাঁর পরিণতি ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যা-ই হোক না কেন, তিনি ড. ইউনূসের পাশে থাকবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার কর্মসূচির দিকে নজর দিতে চাইলে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ বড় পরিসরে মাঠে না থাকায় বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। তবে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা সংস্কারের জন্য ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের সময় দিতে চায়।

সরকারি একটি সূত্র বলেছে, সেনাপ্রধান অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তিনি তাঁর ক্ষমতা দেখান না, তবে কোনো না কোনোভাবে তিনিই এ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছেন।

শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থীদের, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের প্রভাব বেড়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইসলামপন্থী পক্ষগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলনে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে ড. ইউনূসকে আপসও করতে দেখা গেছে।

হাসিনার ক্ষমতাকাল থেকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে ইসলামপন্থী দলগুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করাটা হিতে বিপরীত হতে পারে।
এক পর্যবেক্ষক বলেন, ইসলামপন্থী পক্ষগুলোকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার চেয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি।
এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সদস্যও একমত।

সরকারি একটি সূত্র বলেছে, সেনাপ্রধান অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তিনি তাঁর ক্ষমতা দেখান না, তবে কোনো না কোনোভাবে তিনিই এ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছেন।

জনগণের প্রত্যাশা ধরে রাখা

জনসমর্থন ধরে রাখতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হয়তো দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি উঠতে পারে। আর এটা হলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে বিএনপি। দলটি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ আবারও লেজুড়বৃত্তিক, পেশিশক্তিনির্ভর ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথেচ্ছ ব্যবহারের রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়বে দেশটির ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা।

দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে জনসমর্থন ধরে রাখতে হবে এ সরকারকে। এ জন্য ধীরগতিতে হলেও সরকার যে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পেরেছে, তা দেখাতে হবে।

জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণই অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায়। সে ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মধ্যে একটি হতে পারে, রাষ্ট্রীয় সেবাদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে গেড়ে বসা দুর্নীতি মোকাবিলা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা, পুলিশকে ঢাকার সড়কে ফেরানো। বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে হওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো প্রত্যাহার তা কেবল জনপ্রিয় হবে না, প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচারকদের জন্য সত্যিকারের দায়িত্ব পালনের পথ তৈরি হবে।

এক পর্যবেক্ষক বলেন, ইসলামপন্থী পক্ষগুলোকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার চেয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি।
এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সদস্যও একমত।

দৈনন্দিন কাজের গতি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে উপদেষ্টার সংখ্যা আরও বাড়ানো। আরেকটি বিষয় হলো, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকা উপদেষ্টাদের সঙ্গে অভিজ্ঞ সহযোগী বা কর্মী যুক্ত করা, যা কাজে সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা উচিত, যাতে সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়।

অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কার কমিশনগুলোর উচিত হবে, শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনীর মতো মিত্রপক্ষ ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা। সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে সব পক্ষের একমত হওয়াটা হয়তো সহজ হবে না। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে।

পাশাপাশি কবে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে, দ্রুত এ-সংক্রান্ত একটি পথরেখা ঘোষণা করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের। অনেকে দাবি করছেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে, তাতে দেড় বছরের সময়সীমা বেশি বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে।

আরেকটি বিষয় হলো, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকা উপদেষ্টাদের সঙ্গে অভিজ্ঞ সহযোগী বা কর্মী যুক্ত করা, যা কাজে সহায়ক হতে পারে।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা

মামলা
প্রতীকী ছবি

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সেটা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে হওয়া মামলা ও শেখ হাসিনার শাসনামলে পুরোনো মামলা—উভয় ক্ষেত্রে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষকে যুক্ত করা ভালো হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার করতে হলে ১৯৭৩ সালের যে আইনে এই ট্রাইব্যুনালের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, সেই আইনে সংস্কার আনতে হবে। এই ট্রাইব্যুনালে অন্তত একজন আন্তর্জাতিক বিচারক রাখতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত।

সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তার লাগাম টেনে ধরা। শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সরকারকে সামাল দিতে হবে। দলটির নেতারা ও শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা যে জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিলেন, সেটা স্পষ্ট। তবু পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা দলটির নতুন নেতৃত্বের অধীন পুনর্গঠনের সুযোগ পাওয়া উচিত।

সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তার লাগাম টেনে ধরা। শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
প্রতীকী ছবি

অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশনের মধ্যে পাঁচটিরই কাজ হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনবিষয়ক।

ভবিষ্যতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তার বিস্তৃত রাজনৈতিক সংস্কারের নীতি সফলভাবে এগিয়ে নিতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এমন একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে। সেই সঙ্গে তাদের নির্দলীয় ব্যক্তি হতে হবে।

নির্বাচন কমিশন ছেড়ে যাওয়া কমিশনাররা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করার মতো কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। নির্বাচনী সংস্কার কমিশন সংস্থাটির ক্ষমতা ও দায়িত্বে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করবে বলেও জানিয়েছে।
একটি কথা উঠেছে, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালু করা গেলে আরও বেশি রাজনৈতিক দলের জন্য জায়গা তৈরি হবে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সময়মতো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা কীভাবে বিন্যাস করা যেতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করতে পারে, এমন পদক্ষেপ এড়াতে নয়াদিল্লির এখন সাবধানে পা বাড়ানো উচিত। বরং পানিবণ্টন চুক্তি, উন্নত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক চুক্তির পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন আলোচনার প্রস্তাব দেওয়াসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

আন্তর্জাতিক সমর্থন সংহত করা

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজে অব্যাহত সমর্থন রাখার আশ্বাস দেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই রাজনৈতিক সমর্থন বেশ গুরুত্ববহ।

ড. ইউনূসের উচিত, সরকার ও এর সংস্কার পরিকল্পনায় আরও সমর্থন আদায়ে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি কাজে লাগানো। নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে যত্নশীল হতে হবে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করতে পারে, এমন পদক্ষেপ এড়াতে নয়াদিল্লির এখন সাবধানে পা বাড়ানো উচিত। বরং পানিবণ্টন চুক্তি, উন্নত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক চুক্তির পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন আলোচনার প্রস্তাব দেওয়াসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ভারতের উচিত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাদের সঙ্গে দেশটির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে।

এখন পর্যন্ত বিদেশি শক্তিগুলোর মৌখিক সমর্থন আশাব্যঞ্জক। যেমন কয়েক শ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা বাড়ানো উচিত। কারণ, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এ সরকারের জন্য বড় হুমকি। দাতারা প্রতিশ্রুত কয়েক শ কোটি ডলারের অতিরিক্ত সহায়তা দিলে তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনার আমলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর কিছু সদস্যদেশ ব্যবসার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী ছিল বলে মনে করা হয়। এখন তাদের সেই ক্ষতি মেরামত করার সুযোগ এসেছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা গেলে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর উচিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা এবং বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে সহায়তা করা।
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের উচিত অন্তর্বর্তী সরকার ও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে কাজ করা।

বাংলাদেশ থেকে গত ১৫ বছরে সম্ভবত হাজার হাজার কোটি ডলার অবৈধভাবে সরানো হয়েছে। বেশির ভাগ সম্পদ গেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যে। এসব দেশের বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ জব্দে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কাজ করার দায় আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ যাতে এ সরকারের পেছনে দৃঢ়ভাবে থাকে, তা নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ফলাফল দৃশ্যমান করতে হবে। ভবিষ্যৎ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য রাখার মতো সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হলে আরেকটি স্বৈরশাসনের উত্থান হতে পারে। আর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করলে সেটা হতে পারে আরও বড় ধাক্কা। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর উচিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা এবং বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে সহায়তা করা।