ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার শিকার শ্যামলী বাস নিয়ে ভারতে অপপ্রচার

ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যে

বাংলাদেশে ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া নিয়ে ভারতে অপপ্রচার চলছে বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

আজ মঙ্গলবার রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বাংলাদেশি একটি ট্রাক ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘর্ষ ঘটিয়েছে দাবি করে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া দাবি করা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসটিতে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের স্থানীয় লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের সামনে ভারতবিরোধী নানা স্লোগানও দেওয়া হয়েছে।

ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যে

একই দাবিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীও তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। তথ্যটি ভারতীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের ঢাকাগামী ভারতীয় যাত্রী বহনকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশি ট্রাকের সংঘর্ষের দাবিটি সঠিক নয়। ভারতীয় যাত্রীদের হয়রানি করার তথ্যটিও মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ‘ওভারটেকিং’ (পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা) জনিত কারণে ঘটা দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যে

আলোচিত দাবির বিষয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ১ ডিসেম্বরের প্রকাশিত ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় বাসে হামলা নয়, দুর্ঘটনা ঘটেছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বরাত দেয় রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় বাসে হামলার দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ। উক্ত সম্মেলনে বাসের চালকও মো. আসাদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ভারতের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সুহিলপুরের চান্দিয়ারা এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি ট্রাক বাসটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে চাপ দেয়। এ সময় বাসটি বাঁ দিকে সরে গেলে একটি তিন চাকার যানের (ভ্যানগাড়ি) সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভ্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভ্যানচালক আহত হন। এ নিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক আসাদুল হক ও ভ্যানচালক ইব্রাহিমের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস কর্তৃপক্ষ এবং ভ্যানমালিকের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে মীমাংসা করে। পরে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সেখানে কোনো রকম হামলা কিংবা কোনো দেশ বা সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় বাসে ১৭ জন ভারতীয় এবং ৯ জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। তবে দুর্ঘটনায় তাঁদের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।

ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যে

সংবাদ সম্মেলনে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক মো. আসাদুল হক বলেন, বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের সঙ্গে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কোনো বাগ্‌বিতণ্ডা বা কোনোরকম ঝামেলা হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে তিনি অবাক হয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার মো. জাবেদুর রহমান ঘটনাটি নিয়ে বলেন, একটি সাধারণ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংবাদ সম্মেলনে আনা হয়েছে সত্যটা জানার জন্য।

প্রতিবেদনটিতে উক্ত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনটিও রয়েছে।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে একই দিন ‘ভারত থেকে আসা বাসে হামলা নাকি দুর্ঘটনা; প্রকৃত ঘটনা জানাল ড্রাইভার’ শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

রিউমর স্ক্যানার পরবর্তী সময়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘WION News’–এর সহসম্পাদক সিধান্ত সিবালের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে ভারতীয় এই সাংবাদিক জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রীরা কোনো ধরনের হেনস্তার শিকার হননি। পোস্টটিতে সংযুক্ত ভিডিওতেও একাধিক বাসযাত্রীকে একই কথা বলতে শোনা যায়।

উল্লেখ্য, ১ ডিসেম্বর ‘দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার’ শিরোনামে প্রথম আলোতেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

রিউমর স্ক্যানার বলছে, ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাগামী ভারতীয় যাত্রী বহনকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয় দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।