নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে জেন্ডার বাজেটের প্রভাব মূল্যায়ন জরুরি: মহিলা পরিষদ
নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে জেন্ডার বা লিঙ্গভিত্তিক বাজেটের প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে। জেন্ডার বাজেটের লক্ষ্যের সঙ্গে নারী আন্দোলনের লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে খুব একটা সামাজিক অগ্রগতি হবে না। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আজ রোববার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ: প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রণীত জেন্ডার বাজেট কোনো আলাদা বাজেট নয়, বরং বাজেটে বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ নারী-পুরুষকে কীভাবে প্রভাবিত করে, বাজেটের বিভিন্ন ঘোষণা লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে আনতে কতটা কার্যকর, সেটার একটা সামগ্রিক হিসাব।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ ধরনের সুযোগ না দিয়ে কালোটাকার পাহাড় যাতে কেউ গড়তে না পারে, সরকারকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, জেন্ডার বাজেটের লক্ষ্যের সঙ্গে নারী আন্দোলনের লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সামাজিক অগ্রগতি খুব অগ্রসর হবে না। সম্পদ নিজস্ব স্বার্থে পুঞ্জীভূত রাখলে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, জেন্ডার বাজেট কোনো আলাদা বাজেট নয়। এটি সামগ্রিক বাজেটের একধরনের পর্যালোচনা। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রণয়ন করা হচ্ছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে জেন্ডার বাজেটের প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে। জেন্ডার বাজেটের প্রভাব মূল্যায়নে এবারের বাজেটে সুশীল সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এতে নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেন্ডার বাজেট নিয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জেন্ডার বাজেট প্রণয়নে জেন্ডার ফিন্যান্স ট্র্যাকিং মডেল নামে একটি নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া আইবাস প্লাস প্লাসের (iBAS++) সঙ্গে একীভূত করে জেন্ডার-সংশ্লিষ্ট বরাদ্দের শ্রেণিবিন্যাস এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, এ বছরের জেন্ডার ফিন্যান্স ট্র্যাকিং মডেলে চারটি বিষয়-নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সমতা, সরকারি ও সর্বজনীন পরিষেবাগুলোতে নারীদের কার্যকর প্রবেশাধিকার বাড়ানো এবং নারী উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে জেন্ডার-সংশ্লিষ্ট বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের ধারা উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেন্ডার বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় কন্যাশিশুদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে এর কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, স্কুলে স্যানিটেশন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সমস্যা দূর করতে প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।