বিভিন্ন ধরনের রাইডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, রাইডে উঠেও চিৎকার আর হাতে থাকা মুঠোফোনের ক্যামেরার বাটন চাপা। রাইড থেকে নেমেও চলছে এ কাজ—ছবি তোলা আর ছবি তোলা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে এমন একটা মুঠোফোন থাকলে হয়তো তিনি ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’ না লিখে হয়তো ‘আমার এই ছবি তোলাতেই আনন্দ’ লিখতেন। অন্তত আজ যদি তিনি আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে তাঁর প্রিয় ‘ওরে কচি’, ‘ওরে কাঁচা’দের ছবি তোলায় মাতোয়ারা হতে দেখে সিদ্ধান্ত বদলে ফেললে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। কারণ, ওদের যত আনন্দ ছিল রাইডে ওঠা আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দল বেঁধে ঘোরার, তার চেয়ে আনন্দ কম ছিল না জীবনের এই স্মরণীয় দিনটিকে ছবিতে ধরে রাখার।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ঢাকা পর্বের কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আজ সোমবার সকাল থেকে সাভারের আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমে শুরু হয়েছে। এ পর্বে ঢাকা ও আশপাশের জেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলবে দুই দিন। আয়োজনের প্রথম দিনে আজ অংশ নিচ্ছে ঢাকা জেলার প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। কাল মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের জন্য নাম নিবন্ধন করেছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার আরও ৯ হাজারের শিক্ষার্থী।
কৃতী শিক্ষার্থীরা আজ সকাল নয়টা থেকে ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে তৈরি করা বুথে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হতে থাকে। আগেই নাম নিবন্ধন করা এসব শিক্ষার্থী তাদের নিবন্ধন নম্বর দেখিয়ে বুথ থেকে হাতে লাগানোর ব্যান্ড, রাইডের টিকিট, সনদ, ক্রেস্ট, সকালের খাবার ও দুপুরের খাবারের কুপন সংগ্রহ করে। এরপর পরম উৎসাহে হইচই করতে করতে ভেতরে প্রবেশ করে তারা।
আজ দিনের প্রথম ভাগে আবহাওয়া ছিল বেশ মেঘমেদুর। ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশ করেই কৃতী শিক্ষার্থীরা রাইডে ওঠা, ছোটাছুটি করা ও ছবি তোলায় মেতে ওঠে। মিরপুর থেকে ৩০ জনের এক বিরাট দল বলা যায় রীতিমতো বাহিনী এসেছিল উৎসবে। তারা সবাই মিরপুর মডেল একাডেমির শিক্ষার্থী।
তাদের নেতৃস্থানীয় তৌফিক নজিব, তানভীর আহমেদ, জুবায়ের আহমেদ নামের তিনজন জানাল, সকাল সাতটায় তারা বাড়ি থেকে এসে মিরপুর ১০ নম্বরে সবাই একত্র হয়েছে। তারপর বাসে করে আশুলিয়া আসতে তাদের প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। এখানে চার লেন সড়ক নির্মাণের কাজ হচ্ছে বলে বাসে অনেক সময় লেগেছে। তবে ফ্যান্টাসির ভেতর ঢুকে ‘পথের ক্লান্তি’ ভুলে গেছে তারা।
মেয়ে আশফি তুনাজ্জিনকে নিয়ে এসেছিলেন মা নাফিসা তুনাজ্জিন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ইংরেজির শিক্ষক। মেয়েও একই স্কুলের বেইলি রোডের প্রধান শাখা থেকে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে। উৎসবে অংশ নিয়ে মা-মেয়ে খুবই আনন্দিত। উৎসবে প্রথম আলোর বুথ থেকে আশফি চলতি মাসের বিজ্ঞানচিন্তা ও কিশোর আলো কিনেছে। বাড়িতে প্রথম আলো পত্রিকা রাখা হয় বলেও জানালেন তাঁরা।
নাফিসা তুনাজ্জিন বললেন, ‘প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই সংবর্ধনা ছাড়াও গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগের মতো যে আয়োজনগুলো করে থাকে, তা ওদের জন্য খুবই উপযোগী।’
প্রথম আলোর বুথে উৎসবের দুই দিনে ম্যাগাজিনে ১০ টাকা ছাড়া দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এখানে তাদের বুথে সার্বক্ষণিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও সহায়কেরা রয়েছেন।
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে সেখানে।
কৃতী শিক্ষার্থীরা রাইডে চড়া ও আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। দুপুরের খাবারের পরে উৎসব মঞ্চে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কৃতী শিক্ষকদের সম্মাননা জানানোর পালা। গান করবেন দিলশাদ নাহার কনা, তারকা অতিথি থাকবেন নুসরাত ফারিয়া ও আফরান নিশো। শেষে থাকবে ওয়ারফেজের গান।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে এই জিপিএ-৫ উৎসব। এবার সারা দেশের প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী এই উৎসবে অংশ নিতে নাম নিবন্ধন করেছে। গত ২৫ জুন কক্সবাজার জেলার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এবারের শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনার আয়োজন শুরু হয়। শেষ হবে ২৪ জুলাই।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।