ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির আলোচনায় অগ্রগতি
সবকিছু ঠিকমতো এগোলে আগামী দিনে ভারত থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারবে। এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনকে (আইওসি) স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
তেল রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা মঙ্গলবার বিশেষ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিভিন্ন সামগ্রী রপ্তানি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তেল ওই সব সামগ্রীর অন্যতম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের আইওসি–কে চিহ্নিত করেছে। নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। আমদানি–রপ্তানির এই বিষয় নিয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে। বিষয়টি নিয়ে আইওসি ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে।
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে। বাংলাদেশ সেই সুবিধা ভারত থেকে পেতে পারে কি না এবং এ–সংক্রান্ত আলোচনা দুই নেতার মধ্যে হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এ কথা বলেন। রাশিয়ার তেল নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বলে তিনি সামগ্রিক পণ্য সরবরাহ প্রসঙ্গে আইওসিকে চিহ্নিত করার কথা বলেন। তিনি বলেন, সামগ্রিক পণ্যের মধ্যে তেলও পড়ছে। তবে তা কত দিনে বাস্তবায়িত হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি।
এ প্রসঙ্গে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশকে ভারত ৪ লাখ টন গম সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতে যা প্রয়োজন, তা সার্বিক পরিস্থিতির বিচারে স্থির করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ইউপিআই’ পেমেন্ট (ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশনের তৈরি করা রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেম) সম্ভাবনা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এখনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই দেশের মধ্যে ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এবারও আলোচনা হয়েছে। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশ শঙ্কিত। এই সমস্যার সমাধানে যা কিছু করণীয় ভারত করছে। বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতেও সহযোগিতার হাত বাড়ানো থাকবে। নিশ্চিত ও নিরুপদ্রব প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ভারত সমর্থন করে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা সব সময় ইতিবাচক থেকেছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
নিত্যব্যবহার্য প্রয়োজনীয় পণ্য, যার মধ্যে দ্রুত পচনশীল দ্রব্যও আছে, তার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভারত যত্নবান। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই জন্য ‘সাপ্লাই চেন’ তৈরির ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এসব পণ্যের মধ্যে পচনশীল ও অপচনশীল, খাদ্য ও অন্য সব ধরনের পণ্য রয়েছে। এই সাপ্লাই চেন ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সেপা’ নিয়ে আলোচনা চলতি বছর শুরু হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই জানিয়েছেন। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ওই বোঝাপড়া চূড়ান্ত হবে।
দিল্লি বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশের বিরোধীরা কী বলছেন, সেটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন। সর্বোচ্চ প্রটোকল অনুযায়ী তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সম্মাননীয় অতিথির অমর্যাদা ভারত করে না। প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাব দেওয়া সমীচীন নয়।