অনেক ঘটনা নিয়ে মেলা
বইমেলায় গতকাল বইয়ের চেয়ে বেশি ছিল বইকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া নানা প্রসঙ্গের উত্তাপ। নতুন লেখকদের বই খুঁজছিলেন ঊর্ধ্বতন উন্নয়নকর্মী কল্পনা বসু। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই খুঁজতে খুঁজতে তিনি বলেন, ‘নতুন লেখকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা তা করছেন না। তাই ছাপা বইয়ের সঙ্গে কি এখনকার প্রজন্মের একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে?’ গতকালই তিনি প্রথম এসেছিলেন মেলায়।
গতকাল মেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেল, সেখানেও প্রভাব পড়েছে গত কয়েক দিনের নানা ঘটনার। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চের সামনে কবি সোহেল হাসান গালিবের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে লেখক ও কথাসাহিত্যিকদের একটি অংশ।
মেলা ফুরানোর সময় এগিয়ে আসছে। এখন বিক্রি বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে বন্ধের দিনের চেয়ে গতকাল বিক্রি কম। ক্রেতা বাড়ছে এটাই আশাজাগানিয়া। বিক্রয়কর্মীরা বলেন, প্রথম দিকের বইমেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি থাকে। ফলে ভিড় বেশি হয়; কিন্তু বই কম বিক্রি হয়। তবে শেষের দিকে মূল ক্রেতারা আসেন, এ জন্য শেষ দিকে বিক্রিও ভালো হয়।
মেলা ফুরানোর সময় এগিয়ে আসছে। এখন বিক্রি বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে বন্ধের দিনের চেয়ে গতকাল বিক্রি কম।
সময় প্রকাশনের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বছর বিভিন্ন বিষয়ে ১০টি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। তা নিয়ে এই স্টলে জমজমাট আড্ডা চলছিল। সেখান থেকে জানা গেল, বিক্রি মন্দ নয়। এই সংকলনগুলো সম্পাদনা করেছেন ১০ জন কৃতী সাহিত্যিক। সংকলনগুলোতে লিখেছেন সব বয়সের লেখক।
এবারের মেলায় স্থান পেয়েছে ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী’ ও ‘বি-স্ক্যান’। এর মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস– ‘বি-স্ক্যান’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাড়াও অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য তাদের স্টল সাজিয়েছে। তারা এবারই মেলায় প্রথম অংশ নিল।
স্পর্শ ফাউন্ডেশনের ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা’ ২০১১ থেকে বইমেলায় বই প্রকাশ করে আসছে। এগুলোর সবই দৃষ্টিজয়ীদের জন্য বিনা মূল্যে দিচ্ছে তারা। এর জন্য অবশ্য রেজিস্ট্রেশন করতে হয় আগ্রহীদের।
বাংলা একাডেমির চত্বরে আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের একটি বইয়ের স্টল। সেখানে ভিড় ছিল ভালোই। ওয়াসি আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত রক্তে লেখা বিপ্লব খুঁজছিলেন পাঠক।
দক্ষিণ এশিয়ার ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং বিপ্লবী আন্দোলন নিয়ে অনুসন্ধান করেন নৃবিজ্ঞানী, অধ্যাপক নাঈম মোহায়মেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল আর্টস বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপকের বই বাংলার আলোকচিত্রের বাস্তবতা অভিযান বইটি এসেছে মেলার শুরুতেই নোকতা প্রকাশনী থেকে। মোহাম্মদ আজমের সাংস্কৃতিক পুঁজি ও নতুন বাংলাদেশ বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ প্রকাশনী।
তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে সব্যসাচী প্রকাশনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল গত সপ্তাহে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল কমিটির। আবারও তিন দিনের সময় বাড়ানোর কথা জানালেন তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব বাংলা একাডেমির উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তবে গতকালের মেলায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রসঙ্গ।
মেলা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন জানান, গতকাল থেকে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে নারীদের ওয়াশরুমের সঙ্গে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলা থেকে বের হয়ে আসার পথে প্রথমার স্টল। বিক্রয়কর্মীরা জানান, মহিউদ্দিন আহমদের তাজউদ্দীন নামে একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মহুয়া রউফের দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের গল্প লাতিনের নাটাই বইগুলো ভালো যাচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত মেলার ১৭ দিনে মোট বই এসেছে ১ হাজার ৬৪৪টি।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: অগ্রন্থিত চিঠিপত্র
নানা প্রয়োজনে এবং কুশল বিনিময়ের অংশ হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্বজন-পরিজন ও বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি লিখেছেন। তাঁকেও লিখেছেন অন্যরা। ১৯২৬ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অগ্রন্থিত চিঠি নিয়ে এই বই। প্রাপক ও প্রেরক তালিকায় রয়েছেন কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কাজী আবদুল ওদুদ, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, গোলাম মোস্তফা, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, আবুল ফজল, অন্নদাশঙ্কর রায়, আশুতোষ ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল হাই, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক এসব চিঠি শহীদুল্লাহর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক এবং সেই সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার টুকরো পরিচয় তুলে ধরে। চিঠিগুলোতে পাণ্ডিত্যের ভাবমূর্তির আড়ালে এক সন্তানবৎসল পিতা ও মমতাময় স্বামী শহীদুল্লাহকেও পাওয়া যায়।