তিন খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগ করতে চায় আদানি গ্রুপ
জ্বালানি খাতের পর এবার বাংলাদেশের নৌ পরিবহন, উন্নত প্রযুক্তির জ্বালানি এবং সেবা খাতে বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সোমবার দিল্লিতে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বিনিয়োগ নিয়ে আগ্রহের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গতকাল বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে এখন ভারতে রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জয়পুর থেকে ঢাকায় ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান।
ব্লুমবার্গের বিজনেস ইনডেক্সে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানি গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর একটি ছবি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তিনি পোস্ট দেন। আদানি এতে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা অত্যন্ত সাহসী এবং অনুপ্রেরণা দেয়।’
ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা উল্লেখ করে আদানি তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘বিজয় দিবস, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রসঙ্গত, আদানি গ্রুপের অন্যতম সহযোগী সংস্থা আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা এলাকায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এই কেন্দ্র থেকেই বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ঝাড়খন্ড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আলাদা একটি সঞ্চালন লাইন তৈরি করেছে আদানি পাওয়ার।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কোন কোন খাতে নতুন করে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘গৌতম আদানি তাঁদের বন্দরটি বাংলাদেশকে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এখন কলম্বো বা সিঙ্গাপুর হয়ে পণ্য পাঠিয়ে থাকি। তিনি ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য আদানির বন্দর ব্যবহার করতে বললেন।
‘এ ছাড়া আদানি গ্রুপ বিদ্যুতের যে সঞ্চালন লাইন তৈরি করেছে, সেটার ধারণক্ষমতা তো বেশি। এবার তারা সোলার ও উইন্ড মিলে ব্লেন্ডেড এনার্জির নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি অভিনব এবং ভালো। গৌতম আদানির এসব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এর পাশাপাশি তাঁরা বাংলাদেশে আরও বৃহৎ আকারে বাংলাদেশের জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিভিন্ন দপ্তরে ও মন্ত্রণালয়ে এসব প্রস্তাব দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, এটা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
কোন কোন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদানি গ্রুপ নৌপরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কথা আলোচনায় উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গুজরাট রাজ্যের কোচ জেলায় অবস্থিত মুন্দ্রা বন্দর ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বন্দর। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দরটি সুনাম অর্জন করেছে। এটি ছাড়াও আদানি গ্রুপ ভারতে আরও অন্তত চারটি বন্দর পরিচালনা করছে।