‘জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস ২০২৪’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ১৮৮টি দল। বিভিন্ন দল অবকাঠামোর নকশা জমা দেয়, সেখানে স্থাপনার অবস্থান, মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদন, প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়েছে। যা যা ব্যবহার করেছেন তাঁরা, সেসবের যৌক্তিকতাও তুলে ধরতে হয়েছে। এ রকম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় পেশাগত জীবনে প্রবেশ করার আগেই তাঁরা প্রজেক্ট করতে পারলেন। এর মাধ্যমে যে একটা অভিজ্ঞতা হলো, সেটিই মৌলিক শিক্ষা। ‘জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস ২০২৪’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মূল অর্জনও এটিই। এ ধরনের আয়োজন হলে তা দেশের প্রকৌশলচর্চা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াবে, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং তাঁদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে উঠতে অনুপ্রেরণা দেবে।
সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডের ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে সম্পন্ন হয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস ২০২৪–এর চূড়ান্ত পর্ব। দেশের ভৌত কাঠামো বিনির্মাণে আরও বেশি সচেতন ও পেশাদারি মনোভাব গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জিপিএইচ ইস্পাত ও প্রথম আলো যৌথভাবে দ্বিতীয়বারের মতো এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করল।
এ আয়োজনের একাডেমিক পার্টনার ছিল ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক। বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগ এই কার্যক্রম সমন্বয় করেছে।
পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত এবারের প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি। প্রতিযোগিতায় কয়েক ধাপে অতিক্রম করে সেখান থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে আসে ১২টি দল। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে চূড়ান্ত পর্বের রিপোর্ট মূল্যায়ন ও প্রেজেন্টেশন শেষে বিচারকেরা ফলাফল তৈরি করেন।
এবারের জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) স্ট্যাবল স্ট্রাকচার দল। আর প্রথম রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফিউশন ট্রিনিটি এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রুয়েট জেনেসিস দল। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে সোমবার বিকেল চারটায় শুরু হয় ‘চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান’। সেখানে বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে অর্থ, ক্রেস্ট, মেডেল ও সনদ দেওয়া হয়েছে।
বুয়েটের ফিউশন ট্রিনিটির আম্মার বিন গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, একাডেমিকভাবে যা তাঁরা শেখেন, তা সাধারণত গোছানো থাকে না। পরবর্তী সময়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে গোছাতে হয়। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিষয়গুলো গুছিয়ে আনা গেছে। যা তাঁদের একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করেছে।
এ প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, পুরস্কার পাওয়াটাই বড় কথা নয়। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা পেশাগত জীবনে প্রবেশ করার আগে কীভাবে একটি প্রজেক্ট করতে হয়, তা জানতে পেরেছেন।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টসের প্রধান সমন্বয়কারী মুনির হাসান।
এ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অবকাঠামো প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক এম শামিম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়মিত হওয়া উচিত। এই প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখাতে পারলে ভালো হতো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের একধরনের আত্মোপলব্ধি হয়েছে। অংশগ্রহণ না করলে সেটা থাকত না।
জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো দেশের জন্য কাজ করছে। এ ধরনের কাজে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন স্থপতি মাহবুবা হক বলেন, পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো। প্রকৌশল বিভাগের অন্যান্য ক্ষেত্রেও যদি এ ধরনের আয়োজন করা যায়, বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার আরও বাড়বে।
ধন্যবাদ বক্তব্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, যা কিছু বাংলাদেশের জন্য ভালো, তার সঙ্গে থাকতে চায় প্রথম আলো। ইন-জিনিয়াসের মতো কাজ প্রথম আলো আরও করতে চায়। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কাজের সঙ্গে থাকার একটাই লক্ষ্য থাকে, তা হলো এই কাজ হতে হবে শিশু, কিশোর, তরুণ, শিক্ষার্থীদের জন্য। এর বাইরে খুব একটা যাওয়া হয় না। কারণ, তারাই (তরুণেরা) দেশের ভবিষ্যৎ। সেটি তারা গত জুলাই–আগস্ট মাসেও প্রমাণ করেছে।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিককে ভেন্যু স্মারক দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এই স্মারক তুলে দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল।
ইন–জিনিয়াস ২০১৯ প্রতিযোগিতায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি প্রয়াত হন।
বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা এই জাতীয় অধ্যাপকের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও দেখানো হয় এই অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি এই আয়োজনে আরেকটি ভিডিওতে জিপিএইচ ইস্পাত তৈরির প্রযুক্তি তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নেহরীন মাজেদ।