এসির বাতাস কি স্বাস্থ্যকর
তীব্র গরমে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন দেহ–মন জুড়াতে চাই শীতল বাতাস। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসির সঠিক ব্যবহারে সেই সময়টায় স্বস্তি নিশ্চয়ই পাবেন আপনি। ভয়াবহ তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে উত্তাপজনিত নানান অসুস্থতা থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন, যদি থাকেন এসির আরামদায়ক বাতাসে। গরমের সময় এসির হাওয়ায় কাজ করলে মনোযোগ ধরে রাখাও সহজ। আবার কর্মব্যস্ত দিনের শেষে প্রশান্তির ঘুমের জন্যও সহায়ক হয়ে ওঠে এসি। তবে এমন আরাম-আয়েশের মাঝেও অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে, যদি আপনি এসি ব্যবহারে কিছু বিষয় মেনে না চলেন। কী সেই অস্বস্তি আর কী-ই বা তার সমাধান, জেনে নেওয়া যাক।
অতিরিক্ত ঠান্ডা হাওয়া আমাদের দেহের জন্য নেতিবাচক। ঠান্ডায় কারও কারও অ্যালার্জিও থাকে। তা ছাড়া গরমকালে এসির ঠান্ডা, শুষ্ক হাওয়ার প্রভাব পড়ে অনেকের দেহেই। অন্দরে এসির শীতলতা, আবার বাইরে বেরোলেই প্রচণ্ড উত্তাপ—স্থানভেদে এমন তাপমাত্রার তারতম্য সইতে হলেও কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। আবার এসি রক্ষণাবেক্ষণের ভুলের কারণেও কিছু রোগবালাই হয়ে থাকে। বিস্তারিত জানালেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
হিম বাতাসের কিছু খারাপ দিক
ঠান্ডা বাতাসে থাকার কারণে কিংবা তাপমাত্রার তারতম্যে অনেকেই হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা বা মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। নাক বন্ধ হয়ে থাকতে পারে। ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকলে এ সমস্যাগুলো বারবার হতে থাকে। অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এ ধরনের কিছু সমস্যা হতে পারে। কারও কারও শ্বাসকষ্ট অবধি হতে পারে। ঠান্ডা বাতাসে দেহের নানান ধরনের ব্যথা বাড়তে পারে। পেশির জড়তা অনুভব করতে পারেন কেউ কেউ। আবার কারও খুব ঠান্ডায় থাকার অভ্যাস হয়ে গেলে পরবর্তীতে হালকা গরম আবহাওয়াও অসহ্য ঠেকতে পারে তাঁর কাছে।
শুষ্কতা-বৃত্তান্ত
এসির বাতাস বেশ শুষ্ক। শুষ্ক বাতাস আমাদের শ্বাসনালির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এই বাতাসের প্রভাবে নাক, মুখ এবং
গলার ভেতরটা শুকিয়ে যেতে পারে। মুখ, নাকতালু এবং গলায় অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। শুষ্ক কাশি হতে পারে, নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। তা ছাড়া এসির বাতাসে থাকলে ত্বক এবং চোখও শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত
ধরুন, আপনি রাতে এসি চালিয়ে ঘর বেশ ঠান্ডা করে ঘুমিয়ে গেলেন। রাতের কোনো এক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব করায় আপনার আবার ঘুম ভেঙেও যেতে পারে। এটা ঠিক যে এসির তাপমাত্রা আপনি বিছানায় শোয়া অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু সেই কাজটা করতে গিয়ে আপনার রাতের ঘুমটা নিরবচ্ছিন্ন হবে না। একটানা ঘুমাতে না পারলে ঘুমের সুফল থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আপনি।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে
এসি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে বদ্ধ অন্দরে এই এসির বাতাসের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমিভাব, চোখ থেকে পানি পড়া, নাক থেকে রক্তপাত, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া প্রভৃতি উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। এ রকম কিছু উপসর্গের সমন্বয়কে বলা হয় ‘সিক বিল্ডিং সিনড্রোম’। এসির যত্ন না নিলে বাতাসে ধুলা–ময়লা এবং জীবাণু থাকতে পারে। এসবের কারণে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহও হতে পারে।
সুস্থ থাকতে যা মেনে চলতে হবে
এসির তাপমাত্রা কখনো খুব কমাতে নেই। মাঝারি তাপমাত্রাই দেহের জন্য স্বস্তিদায়ক।
বাইরে থেকে ফিরে দ্রুত ঘর ঠান্ডা করবেন না। গরম আবহাওয়া থেকে এসে খুব ঠান্ডা করে রাখা কোনো ঘরে চট করে না ঢুকতে চেষ্টা করুন। তেমনি বাইরে খুব গরম থাকলে বেরোনোর আগে কিছুক্ষণ এসি বন্ধ রাখা যেতে পারে।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাতাস আর্দ্র থাকবে। শুষ্কতাজনিত সমস্যা এড়ানো যাবে।
ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বক আর্দ্র থাকবে।
একটানা কোনো দিকে তাকিয়ে না থেকে চোখের পলক ফেলুন নিয়মিত।
নিয়মমাফিক এসি রক্ষণাবেক্ষণ করুন।