ঘন কুয়াশায় গুগল ম্যাপ দেখে চলছে ট্রলার
ঘড়িতে তখন সকাল সোয়া সাতটা। ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে রামচরণ ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় একটি কাঠের ট্রলার। যাত্রা শুরুর প্রায় ২৫ মিনিট পর চারপাশে ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখছিলেন না চালক আনোয়ার হোসেন। এ সময় ট্রলারে সহযোগী হিসেবে থাকা ছেলেকে ডাক দেন তিনি। জানতে চান, ঠিক পথে যাচ্ছেন কি না।
আনোয়ারের ছেলে ফখরুল ইসলাম একটি মুঠোফোন নিয়ে চলে আসেন তাঁর কাছে। সেখানে গুগল ম্যাপ চালু করে দিকনির্দেশনা দেন বাবাকে। এ চিত্র আজ শুক্রবার সকালের।
সে সময় ট্রলারটিতে যেতে যেতে কথা হয় চালক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশায় তাঁর মতো মেঘনা নদীর প্রায় সব চালকই গুগল ম্যাপের সহায়তা নিয়ে ট্রলার চালাচ্ছেন। ছোটখাটো অন্য নৌযানগুলোরও একই অবস্থা।
ট্রলারটিতে সহকারী হিসেবে নিয়োজিত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফখরুল ইসলাম ১৯ বছরের তরুণ। তিনি জানান, পাঁচ বছর আগে স্মার্টফোন কেনেন। এর পর থেকেই বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে ট্রলারচালক বাবাকে সহযোগিতা করে আসছেন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ম্যাপ দেখে উভয় দিকের চরের অবস্থা বোঝা যায়, যা তাঁদের গন্তব্যে যেতে সহায়তা করে।
মাঝি ও তাঁর ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একসময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখনো মুঠোফোনে আগে চালু করা ম্যাপ দেখে পথের অনুমান করছিলেন ট্রলারচালক। তবে তখন ট্রলারের গতি কিছুটা কমিয়ে দেন তিনি।
ট্রলারচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, বংশপরম্পরায় নৌকা-ট্রলার চালানোর কারণে স্থানীয় নৌপথ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে তাঁদের। অভিজ্ঞতার সঙ্গে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ট্রলার চালানোর কারণে বৃষ্টি অথবা কুয়াশায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কিন্তু ম্যাপ ব্যবহারের আগে একবার পথ ভুলে হাতিয়ার পশ্চিম উপকূলের পরিবর্তে পূর্ব উপকূলে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
ট্রলারটিতে কথা হয় সাদ্দাম হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় নৌপথটিতে যাতায়াত করেন। শীত মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় মাঝিদের এভাবে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম নগরের কর্নেলহাট থেকে আসা রতন বণিক নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘ঘন কুয়াশা দেখে মাঝি গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, সংশয়ে ছিলাম। কিন্তু তাঁদের গুগল ম্যাপ ব্যবহার দেখে সেই শঙ্কা দূর হয়েছে।’
ট্রলারটি যখন হাতিয়ার রামচরণ ঘাটে পৌঁছায়, তখন সকাল ৯টা ১০ মিনিট।