জঞ্জাল সরিয়ে যেভাবে হলো সবুজ মাঠ
পুরো মাঠের চারপাশে বছরখানেক আগেও ছিল অবৈধ দোকান। মাঠের ভেতরে চলত বিভিন্ন ধরনের মেলা; রাখা হতো রিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। মাঠের একপাশে জমে ছিল আবর্জনার স্তূপ। অথচ মাঠটি জুড়ে এখন সবুজ ঘাসের চাদর।
চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন এই মাঠটি আউটার স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত। গত বছর মাঠটি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে গত বছরের মার্চ মাসে মাঠের আশপাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা, মাঠের ভেতরে থাকা আধা পাকা দোকানসহ অন্যান্য জঞ্জাল উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এরপর শুরু হয় মাঠ সংস্কারের কাজ।
২০১৭ সালে সুইমিং পুল নির্মাণের পর ছোট হয়ে যায় আউটার স্টেডিয়াম মাঠ। মাঠের যেটুকু উন্মুক্ত ছিল, সেটিও নানাভাবে দখলে থাকায় বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা। মাঠটি রূপ নেয় পতিত জমিতে। অথচ মাঠটিতে স্টার যুব ও নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট আয়োজন হতো একসময়। এই মাঠ থেকে উঠে এসেছেন সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার আশীষ ভদ্র এবং আকরাম খান, আফতাব আহমেদ, তামিম ইকবালের মতো ক্রিকেটাররা।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মাঠেই লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এসব ঘাস পরিচর্যায় দেওয়া হচ্ছে পানি। পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় মাঠটিতে স্কুল-কলেজ ও জেলা পর্যায়ের খেলাধুলা হতো। মাঠের চারপাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতেন দর্শকেরা। তবে একসময় খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। মাঠটি সংস্কার হলে আবারও পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
সিজেকেএস সূত্রে জানা গেছে, মাঠটি সংস্কারে সিজেকেএসের নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে মাঠে ঘাস লাগানো হয়েছে। মাঠে ঘাস গজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক স্প্রেডিং পদ্ধতি। সাধারণত রোপণ পদ্ধতির মাধ্যমে ঘাস গজানো হয়। তবে স্প্রেডিং পদ্ধতিতে মূলসহ ঘাস কেটে তা মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে মাঠে খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
মাঠটি ঢেলে সাজাতে নকশা করেছেন স্থপতি আশিক ইমরান। নকশা অনুযায়ী, বর্তমান আউটার স্টেডিয়ামের আয়তন প্রায় ১১ হাজার বর্গমিটার। এর মধ্যে ৮ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি হবে ফুটবল স্টেডিয়াম। পাশ ঘেঁষে হবে ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য চারটি নেট। থাকবে ভলিবল আর হ্যান্ডবলের কোর্ট। মাঠের দুই পাশেই ১৫০ থেকে ২০০ আসনের গ্যালারি তৈরি করা হবে। এ ছাড়া পুরো মাঠের দুই পাশে হাঁটার জন্য থাকবে ওয়াকওয়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী মাঠ এটি। এটি সংস্কারের জন্য যাবতীয় উদ্যোগ সিজেকেএস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঠে ঘাস লাগানোর কাজ প্রায় শেষ। আশা করা যায়, এ বছরে মধ্যে গ্যালারি, ওয়াকওয়ে ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হবে। তবে এর আগেই খেলাধুলার জন্য মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।