রাখাইনে বাংলাদেশ মিশনের সবাইকে সরানো হচ্ছে ইয়াঙ্গুনে
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে রাখাইনের সিত্তে থেকে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের কূটনীতিকদের ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার পরিবারের সদস্যসহ তিনজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকেলে ইয়াঙ্গুন থেকে মুঠোফোনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কূটনীতিকসহ মোট ছয়জন ওই মিশনে কর্মরত। এ ছাড়া তাঁদের পরিবারের চারজন সদস্য আছেন। তিনজনকে গতকাল সরিয়ে আনা হয়েছে। বাকিদেরও আগামীকাল সাময়িকভাবে ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে স্থানীয় দু–একজন নাগরিক অবস্থান করবেন।
৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে দেশটির অন্তত ৩৩০ নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির লড়াই দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সিত্তেতে অপেক্ষা করছে। কিন্তু ইউএমএস চীন্দউইন নামের মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজ গতকাল বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পায়নি। বাংলাদেশের অনুমতি পাওয়ার পর জাহাজটি মাঝসমুদ্র থেকে নিজেদের লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে নেবে।
গতকাল সকালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে তাঁর দপ্তরে মিয়ানমারের লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কূটনীতিকসহ মোট ছয়জন ওই মিশনে কর্মরত। এ ছাড়া তাঁদের পরিবারের চারজন সদস্য আছেন। তিনজনকে গতকাল সরিয়ে আনা হয়েছে। বাকিদেরও আগামীকাল সাময়িকভাবে ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে আনা হচ্ছে।বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকে এ সপ্তাহের মধ্যে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের কীভাবে কোন পথে ফেরত নেবে, সেটি কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করে। শুরুতে কক্সবাজারে জেটি থেকে তাঁদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা করা হলেও এখন মাঝসমুদ্র থেকে তাঁদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ৩৩০ নাগরিকের মধ্যে অন্তত ৯ জন আহত রয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের সব নাগরিককে একসঙ্গে জাহাজে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সিত্তে বন্দরসহ রাখাইনের আশাপাশের এলাকায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে দেশটির অন্তত ৩৩০ নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।