ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবেল বিজয়ীর খোলাচিঠি
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করেছে। চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, আল গোর, তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ ১৪ জন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। ওরহান পামুক, জে এম কোয়েটজিসহ ৪ জন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী আছেন ৭ জন। এ ছাড়া রসায়নে ২৮ জন নোবেল বিজয়ী, চিকিৎসাশাস্ত্রে ২৯ জন নোবেল বিজয়ী এবং পদার্থবিজ্ঞানে ২২ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিদাতাদের তালিকায়। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক কমান্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠিতে যা লেখা হয়েছে:
নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আপনার কাছে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার দেশ যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা আমরা স্বীকার করছি।
অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যে হুমকি দেখা গেছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং নির্বাচনকালীন প্রশাসন দেশের প্রথম সারির দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের প্রতি যেসব হুমকি রয়েছে, তার মধ্যে একটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সেটি হলো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা। আমরা এ কারণে শঙ্কিত যে সম্প্রতি তাঁকে নিশানা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমরা মনে করি। তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ৪০ জন বিশ্বনেতা আপনার কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে।
আমরা সম্মানের সঙ্গে আপনার প্রতি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। এরপর একটি নিরপেক্ষ বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হোক। ওই বিচারিক প্যানেলে আন্তর্জাতিকভাবে আইনবিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তিরা ভূমিকা রাখবেন। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তাঁর বিরুদ্ধে দুদক ও শ্রম আইনে যেসব মামলা চলছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে তাঁর দোষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আপনি জানেন অধ্যাপক ইউনূস যে কাজ করেন, তা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। সামাজিক ব্যবসা কীভাবে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি আনতে পারে, তা তিনি দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর করা এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, তার নেতৃত্বস্থানীয় দৃষ্টান্ত তিনি। কোনো ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানি ছাড়া স্বাধীনভাবে তিনি তাঁর পথপ্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।
আমরা আশা করি, আপনি এসব আইনগত বিষয়ের যথাযথ, নিরপেক্ষ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে সব ধরনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো নিশ্চিত করবেন। আগামী দিনগুলোতে এসব বিষয়ের সুরাহা কীভাবে হবে, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নজর রাখছে। আমরাও সেই সব মানুষের কাতারে রয়েছি।