ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন নিয়ে দুদিনের জাতীয় সংলাপ শুরু শুক্রবার

জাতীয় সংসদ ভবনফাইল ছবি

ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশে (কেআইবি) সকালে শুরু হবে এই সংলাপ। আগামী শনিবার এই সংলাপ শেষ হবে। এই সংলাপ থেকে নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, ছাত্রনেতারা, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরাও এতে বক্তব্য দেবেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) নামের একাডেমিক, বিশ্লেষক ও গবেষকদের একটি প্ল্যাটফর্ম এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেআইবিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এফবিএস এসব তথ্য জানিয়েছে। এই বেসরকারি উদ্যোগে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিগুলোর সহযোগিতা করছে।

জাতীয় এই সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায়। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও অর্থনীতিবিদ মুশতাক হুসাইন খান। এতে সমাপনী বক্তব্য দেবেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

এরপর সংলাপের প্রথম দিন দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। ‘ঐক্য কোন পথে’ শিরোনামের প্রথম অধিবেশনে রাজনীতিবিদদের মধ্যে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার, সৈয়দ মহাম্মদ রেজাউল করিমসহ অনেকে। উপদেষ্টাদের মধ্যে থাকবেন আদিলুর রহমান খান, শারমীন মুরশিদ ও মাহফুজ আলম। আরও থাকবেন ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান, বদিউল আলম মজুমদার, হোসেন জিল্লুর রহমান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ।

‘রক্তের ঋণ ও ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা’ শিরোনামে দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকে।

সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ‘গুম–খুন থেকে জুলাই গণহত্যা: বিচারের চ্যালেঞ্জ’, ‘সংস্কারের দায় ও নির্বাচনের পথরেখা’ এবং ‘ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা’ শিরোনামে তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এসব অধিবেশনে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও এম তৌহিদ হোসেন। রাজনীতিকদের মধ্যে থাকবেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুলাহ মোহাম্মদ তাহের, জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন বলেন, এই সংলাপের মূল কথা ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন। নির্বাচনসহ অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। এই সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অভিমত ব্যক্ত করবে। তাদের আলোচনার আলোকে একটা ঐক্যের জায়গা খোঁজার চেষ্টা করা হবে। তারপর একটা যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে যে কী কী বিষয়ে ঐকমত্য হলো।

সালেহ উদ্দিন বলেন, হয়তো একটা সংলাপে সমাধান হবে না। তার পরের সংলাপ সরকারিভাবে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে হবে। তখন সব কমিশনপ্রধান এই সংলাপে অংশ নেবেন।

সুচিন্তিতভাবে ফ্যাসিবাদের গোষ্ঠী ও সহযোগীদের এই সংলাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু প্ল্যাটফর্মটা করে দেওয়া, যেখানে বিভিন্ন পক্ষের ও মতের লোকেরা কাছাকাছি বসে কথা বলবেন। কথা বললে দূরুত্ব কমে। আমরা চাই দূরত্ব কমুক, ঐক্য চাই, সংস্কার চাই।’

গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে দূরুত্ব আছে বলে মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দূরত্ব কতটা আছে এবং সেটি কীভাবে সমাধান করা যায়, তা দেখার চেষ্টা করা হবে এই সংলাপে।

এফবিএসের সদস্য সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, কমিশনগুলো অনেক সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু জাতীয় ঐক্য না হলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে না। সংস্কার করতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী দিলরুবা শারমিন ও এফবিএসের সদস্য তৌফিক জোয়ার্দার।