ডিসি অফিসের দরজা–জানালা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা রাখবেন: কুষ্টিয়ার ডিসিকে হাইকোর্ট
হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিসের দরজা-জানালা খোলা রাখবেন। দরজা জানালায় কোনো পর্দা রাখবেন না। যাতে মানুষ আপনাকে দেখতে পারে। সাধারণ মানুষ যেন সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে।’
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা এক মামলার শুনানিতে আজ সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে এ কথা বলেন।
সম্পত্তি নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় কুষ্টিয়ার শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী এই আদালত অবমাননার আবেদন করেছিলেন। এর শুনানি নিয়ে ১১ আগস্ট হাইকোর্ট ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি ও নিলামে সম্পত্তি কেনা ব্যক্তিকে ২১ আগস্ট আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ওসি ছাড়া অপর তিন কর্মকর্তা ও সম্পত্তি কেনা ব্যক্তি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুনানির একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনাকে আদালতে আসতে হবে না। তবে সতর্ক করছি। সাধারণ জনগণের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখবেন। দরজা–জানালায় কোনো পর্দা রাখবেন না, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে। অভিজ্ঞতা আছে, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। দরজা-জানালায় ভারী পর্দা দেওয়া থাকে। যেকোনো মানুষ যাতে আপনার কাছে যেতে পারে, সে জন্য কোনো ভারী পর্দা রাখবেন না।’
‘আপনারা লাক্সারিয়াস জীবন যাপন করেন’ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের তেমন যোগাযোগ থাকে না। সব শ্রেণির মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে আপনি বসে কাজ করছেন। লুঙ্গি পরা একজন মানুষও যেন প্রয়োজনে আপনার কাছে যেতে পারে। চুরি, ডাকাতি, গুন্ডামি, দখলবাজি যদি চলে—এসব নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে দেখবেন। অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘একজন জেলা প্রশাসক সরকারের হার্ট’ উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আপনাদের কাজের ওপর সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। আপনারা অনেক কাজ করেন, তারপরও সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখুন। এ মামলায় অভিযোগকারী আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন, তবে আপনার কাছ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আপনার অফিসের লোকজন অভিযোগ গ্রহণ করেননি। সেদিন যদি আপনি অভিযোগ সম্পর্কে শুনতে পেতেন, তাহলে হয়তো এত দূর আসত না।’
শুনানি নিয়ে আদালত জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। অপর চারজনকে আগামী ২৪ অক্টোবর হাজির থাকতে বলা হয়েছে। সেদিন শুনানির জন্য পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।
আদালতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান, পুলিশ সুপারের পক্ষে আইনজীবী ইউসুফ খান, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পক্ষে আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের (আদালত অবমাননার আবেদনকারী) পক্ষে আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানিতে ছিলেন। নিলামে সম্পত্তি ক্রয়কারী আবদুর রশিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নূরুল আমিন।
আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী জানান, শফিকুল ইসলামের করা রিটের প্রেক্ষাপটে ২ আগস্ট হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিতের আদেশ দেন। শর্ত হিসেবে শফিকুলকে ৩০ দিনের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা জমা দিতে এবং ৬ কোটি টাকা ১২ মাসে সমান হারে পরিশোধ করতে বলা হয়। এ আদেশ থাকার পরও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫ আগস্ট ভোরে শফিকুলের সম্পত্তির দখল নেন নিলাম ক্রেতা রশিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। এর পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুল আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন।