চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৫) প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানসহ ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।
বিচারপতি মো. খায়রুল আলম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটের ওপর চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. কামাল হোসেন।
‘নিম্নমানের বই ছেপে ১২ বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট!’ শিরোনামে গত ৩ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ‘এনসিটিবির শ্বেতপত্রে দুর্নীতি “ধামাচাপা”’ শিরোনামে ১৪ ডিসেম্বর অপর একটি দৈনিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এই দুটিসহ এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন ৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আবেদন দেন। এতে এনসিটিবির ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ)–২০০৬ পরিপন্থী মাত্রারিক্ত ভেরিয়েশন যুক্ত দরদাতাকে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ১০ শতাংশের অতিরিক্ত দরে কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের শতকোটি টাকার ক্ষতি প্রতিকারে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দৃশ্যমান কোনো ফল না পেয়ে আজ রিটটি দায়ের করা হয় বলে জানান রিট আবেদনকারী।
প্রতিবছর এনসিটিবি প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে বিনা মূল্যে তা সরবরাহের জন্য সরকারের রাজস্ব খাত থেকে অর্থ পাওয়ার পর মুদ্রণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে থাকে বলে জানান আইনজীবী মো. কামাল হোসেন।
প্রথম আলোকে কামাল হোসেন বলেন, এ বছরের দরপত্র বিশ্লেষণে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্কলিত দর থেকে গড়ে ২১ শতাংশ অতিরিক্ত দরে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেছে; সেই দরে সেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পায় এবং এতে সরকারের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। এ বছর কাগজ ও কালির মূল্য স্থিতিশীল থাকার পরও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ছাপাখানার মালিকদের সিন্ডিকেট করে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২১ শতাংশ অতিরিক্ত দরে কাজ দেওয়া হয়। তাই বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ এনসিটিবির ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, পিপিএ এর ৩১(৩) ধারা লঙ্ঘন করে ২০২৫ সালের প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। এনসিটিবির ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রুলে। পাশাপাশি বই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।