লাইসেন্স ছাড়া কসমেটিকস উৎপাদন ও বিতরণ নয়, সংসদে বিল পাস
লাইসেন্স ছাড়া কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানি করা যাবে না। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নেওয়ার বিধান রেখে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলে লাইসেন্স ছাড়া কসমেটিকস এবং ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি ও বিতরণের অপরাধে বিভিন্ন সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই–বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সে আরোপিত শর্তের বাইরে গিয়ে ওষুধ উপাদন করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুত করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের অবৈধ ব্যবহারেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।
বিলে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া অথবা লাইসেন্সে আরোপিত শর্তের বাইরে গিয়ে কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। বিধি লঙ্ঘন করে কোনো বিউটি পার্লারে কসমেটিকস ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমান বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে কোনো কসমেটিকসের ব্যবহার বা ব্যবহারজনিত ফলাফল সম্পর্কিত অসত্য দাবি থাকলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড হবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, কসমেটিকসে ভেজাল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হবে।
বিলে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান অভিযোগ করেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ জড়িত আছে। বিলের বেশ কিছু ধারা জনস্বার্থ পরিপন্থী হতে পারে। কোনো ‘পীর-দরবেশের স্বার্থে’ তড়িঘড়ি করে পাস করা ঠিক হবে না।
জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের বাজারে পাওয়া যায় এমন দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস কেরানীগঞ্জ ও জিঞ্জিরাসহ পুরান ঢাকায় তৈরি হয়। তাঁর অভিযোগ, এগুলো তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও আটা–ময়দা ব্যবহার করা হয়। ফলে এগুলো ব্যবহার করে মানুষ ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কসমেটিকস এবং ওষুধ দুটি ভিন্ন দ্রব্য। হঠাৎ করে ঔষধ প্রশাসনের কাছে এটি কেন দেওয়া হচ্ছে? এ বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের সেখানে ডাকা হয়নি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্বই ঠিকভাবে করতে পারছে না, ২৩৬টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু করছে না। এর মধ্যে তাদের বাড়তি দায়িত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন এবং ১৯৮২ সালের আইন দুটিকে এক করে যুগোপযোগী করে এই বিল আনা হয়েছে। কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। মানুষের স্বাস্থ্য এবং ভেজাল ওষুধ ও কসমেটিকস প্রতিরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য।