পদোন্নতিসহ নানা দাবিতে এবার বিসিএসের ২৫টি ক্যাডারের জোট
পদোন্নতি, পদায়ন, নতুন পদ সৃষ্টিসহ বেশ কিছু দাবিতে একটি জোট গড়েছেন প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। জোটের নাম দেওয়া হয়েছে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ জোটের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তাঁর’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জোটে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, যেকোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ পদের দায়িত্ব নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিতে হবে। এসব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিসিএস ক্যাডারে বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশাসন ঢেলে সাজাতে এ পরিষদ গঠন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নবগঠিত এই জোটের সদস্য ফারহানা আক্তার। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ, শিক্ষা ক্যাডারের প্রতিনিধি মফিজুর রহমান, আহসান হাবিবসহ অন্যরা। জোটের পক্ষ থেকে নিজেদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তাঁরা।
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মকর্তারা বলেন, শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই নিয়মিত পদোন্নতি হয়। পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দিতে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। অথচ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পান না। দিনের পর দিন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকেন। সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, প্রয়োজনে সুপারনিউমারারি ও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়া সব ক্যাডারের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডের পদ তৈরি করে বৈষম্য নিরসনের আহ্বান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সদস্য ফারহানা আক্তার বলেন, একটা সময়ে দেশে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল। একজন অধ্যাপককে শিক্ষাসচিব, চিকিৎসককে স্বাস্থ্যসচিব করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি; বরং ক্যাডারগুলোর মধ্যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পান। উপসচিবেরা গাড়ি কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ পান, আবার সেই গাড়ি পরিচালনার জন্য মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এমন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাঁরা বিগত সরকারকে অনৈতিক সুবিধাও দিয়েছেন। ‘দিনের ভোট রাতে হওয়াটা’ তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফারহানা আক্তার বলেন, স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্রের সব কাঠামো ভেঙে জনগণের রাষ্ট্রকে মুষ্টিমেয় মানুষের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। এর মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এ সংস্কার শুরু করতে হবে সিভিল সার্ভিস দিয়ে। বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হচ্ছে কি না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ বলেন, এটি নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। এটি ন্যায্য দাবি। আইন ও চাকরিবিধি মেনেই তাঁরা এ সংবাদ সম্মেলন করছেন।
এ এস এম জাহিদ বলেন, ‘একই প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সবার জন্য একই চাকরিবিধি, আমরাও সমান সুবিধা ও কাজের সুযোগ চাই। বিশেষায়িত জ্ঞান কাজে লাগাতে চাই। সমবায় ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ২৮ বছর কাজ করলেন। অথচ তাঁর ওপরে একজন মহাপরিচালক বসিয়ে দেওয়া হলো প্রশাসন ক্যাডার থেকে, যাঁর এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মফিজুর রহমান বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনের বিনিময়ে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে সব সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অদক্ষ ও অপেশাদার ব্যক্তিদের দিয়ে নীতিনির্ধারণের কারণে দেশের সব সফলতা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সব খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে ক্যাডার সার্ভিসে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে জনস্বার্থবিরোধী ও অপেশাদার প্রশাসন গড়ে উঠেছে। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে মূল অন্তরায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কারণ, দেশের প্রতিটি খাতে পরিকল্পনা করছেন প্রশাসন ক্যাডারের অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য দেখান।