পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দুবাইয়ে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। দুবাইয়ে তাঁর বহুল আলোচিত সোনার দোকানটিও বন্ধ রয়েছে। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি সূত্র জানিয়েছে, আরাভ খান গা ঢাকা দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের মামলার তত্ত্বাবধানকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, রবিউল ওরফে আরাভের অবস্থান এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নাকি অন্য কোথাও, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি।
পুলিশের পরিদর্শক মামুন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রবিউলকে ফেরত আনার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি দুবাইয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে সেখান থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।রাজীব আল মাসুদ, মামুন খুনের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার
ঢাকায় পুলিশের তথ্যানুযায়ী, মামুন খুনের ঘটনার পর রবিউল পালিয়ে যান। পরে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করেন। গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি সোনার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি।
মামুন খুনের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রবিউলকে ফেরত আনার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্প্রতি দুবাইয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে সেখান থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি আলোচনায় আসার পর বাংলাদেশ পুলিশ রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানায়। এরপর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় তাঁর নাম আসে। তবে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, রবিউল ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে গেছেন। সে কারণে তাঁকে সেখান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই রবিউলকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশের সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোসহ (এনসিবি) সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুবাইয়ে যোগাযোগ রাখছে। ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে। তবে সেটি শুধু দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রবিউল এখনো সাজাপ্রাপ্ত নন। তাই তাঁকে বাংলাদেশে ফেরাতে হলে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারতকেও যুক্ত করার প্রয়োজন দেখছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে দুবাই ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই রবিউলকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশের সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোসহ (এনসিবি) সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুবাইয়ে যোগাযোগ রাখছে। ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো অগ্রগতি থাকলে ইন্টারপোল বাংলাদেশ পুলিশকে জানাবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রবিউলকে ফিরিয়ে আনা যাবে।