টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কি না, জানা যাবে কাল
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কি না, তা কাল বুধবার জানা যাবে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে এই রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন জাহাজ চলবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাল আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুট পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া উচিত। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। জাহাজ চলাচলের অনুমতি না দিলে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় সরকারকে নিতে হয়। তাই জাহাজ চলাচলের বিষয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর বিভিন্ন জায়গায় বালুচর জেগে উঠেছে। আবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে এ রুটে চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। মূলত, এ দুই কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
বিকল্প হিসেবে টেকনাফের সাবরাং থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত নতুন রুট চালু করে এই পথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও ভাবছে সরকার।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে অনুমতি দেওয়া না যায়, তবে নতুন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে এই মুহূর্তে নতুন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের পক্ষে নন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, পর্যটনের মৌসুম শেষ হতে বাকি মাত্র আড়াই মাস। নতুন রুট চালু করতে করতে এবারের মৌসুম চলে যাবে। এবার জাহাজ চালাতে না পারলে ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই নতুন রুট চালু না করে পুরোনো টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটেই জাহাজ চলাচল চালুর দাবি ব্যবসায়ীদের।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।
যুক্তি হিসেবে নাফ নদীর নাব্যতা–সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার কথা উল্লেখ করেন মোকাম্মেল হোসেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চালু করতে সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করেছিল জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব) ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকালের আন্তমন্ত্রণালয় সভাটি ডেকেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধিদেরও সভায় থাকতে বলা হয়েছে। সভায় নৌসচিব মোস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করবেন। পর্যটনসচিব মোকাম্মেল হোসেন সভায় কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, সভার জন্য দুটি আলোচ্য সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এক, টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন রুটে পুনরায় নির্বিঘ্নে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বিষয়ে পর্যালোচনা। দুই, বিকল্প রুট হিসেবে সাবরাং থেকে সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচলের সম্ভাব্যতা দেখা। বৈঠকে সবাই মতামত দেবে। মতামতের আলোকে সিদ্ধান্ত আসবে।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল চালু রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে দৈনিক ৮ থেকে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করত। এখন কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ১২টি জাহাজ চলাচল করে।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ পুনরায় চালু করতে গত অক্টোবর মাসে স্কোয়াব ও টুয়াক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। জাহাজ চালুর দাবিতে ধর্মঘটও হয়েছে। তবে সরকার তার অবস্থানে এখনো অনড়।
স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ থেমে গেছে। বান্দরবানে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নাফ নদীর নাব্যতা–সংকট এখন নেই। তা ছাড়া কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলছে। তাই আমাদের দাবি, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে দ্রুত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।’
আগামীকাল অনুষ্ঠেয় আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত না এলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেন তোফায়েল।
সরকার টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনের পরিবর্তে সাবরাং-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলে কী করবেন, জানতে চাইলে তোফায়েল বলেন, ‘এখন আর নতুন রুট চালুর সময় নেই। আমরা গত অক্টোবরে রুটটি চালুর আবেদন করেছিলাম।
কিন্তু তখন তা করা হয়নি। এখন পর্যটনের মৌসুম শেষের দিকে। নতুন রুটে জাহাজ চালু করতে গেলে জেটি নির্মাণ করতে হবে। এতে অনেক সময় চলে যাবে। আমাদের রুটিরুজির কথা বিবেচনা করে এখনই টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া উচিত।’