সড়কে যেন হত্যাকাণ্ড চলছে
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারি সংস্থা বিআরটিএর হিসাবেই এবারের ঈদযাত্রায় মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের, যা গত বছরের ঈদযাত্রার চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। একেকটি মৃত্যু শোকগ্রস্ত করেছে স্বজনদের, অসহায় করেছে পরিবারগুলোকে।
ফরিদপুরে ১৬ এপ্রিল বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল, বাসটির ফিটনেস সনদ নেই। অবৈধভাবে ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। সড়কেও ছিল কিছু খানাখন্দ। পরে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি জানায়, অতিরিক্ত গতি, বাসচালকের ঘুম ঘুম ভাব এবং বাসের সামনে ইজিবাইক এই দুর্ঘটনার কারণ।
বাসের ফিটনেস আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। ট্রাকে যাত্রী তোলা ও অতিরিক্ত গতি ঠেকানো এবং তিন চাকার যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ রাখার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। সড়ক খানাখন্দমুক্ত রাখার কাজটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ)। আর চালকের বিশ্রাম নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকপক্ষের।
শুধু ফরিদপুর নয়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২২ এপ্রিল বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর জানা যায়, বাসটি ফিটনেসহীন, ৪৩ বছরের পুরোনো। এর পাঁচ দিন আগে (১৭ এপ্রিল) ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী ট্রাকের চাপায় ১৪ জনের মৃত্যুর পর বেরিয়ে আসে, চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।
সাত দিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া তিনটি দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক মো. হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা হবে কি না, তা এখন ভাবার সময় এসেছে। দুর্ঘটনা বললে দৈব বা প্রকৃতির ওপর দায় চাপানো হয়ে যায়। আসলে দুর্ঘটনা ঘটার সব উপকরণই এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ছিল। তাই এটাকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বলা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, অবহেলায় যাঁরা যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেকের বিচার হওয়া দরকার। নইলে অনিয়ম ও অবহেলা চলতেই থাকবে।
ফিটনেসবিহীন, লক্কড়ঝক্কড় যান চলাচল বন্ধ এবং যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো বন্ধে প্রয়োজন সমন্বিত ও নিয়মিত অভিযান।
দেশের সড়কে প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আহত হচ্ছেন এর চেয়ে বেশি। কিন্তু সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জোরালো উদ্যোগ নেই। মাঝেমধ্যে কিছু ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়, কিছু জরিমানা হয়; কিন্তু পরিকল্পিত, সমন্বিত কোনো কার্যক্রম চালানো হয় না।
এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক ঈদযাত্রায় বহু মানুষের মৃত্যু ও তিনটি বড় দুর্ঘটনার পর বিআরটিএ আবার সেই ‘নামকাওয়াস্তে’ অভিযান শুরু করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবারও আট বিভাগে ৪০৬টি মামলায় ৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৯টি গাড়িকে ‘ডাম্পিংয়ে’ (ধ্বংস করার জন্য নিয়ে যাওয়া) পাঠানো হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার জন্য এখন গতি একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকালও গতির নীতিমালা তৈরির জন্য বৈঠক হয়েছে। শহর, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক—সব স্থানেই গতি বেঁধে দেওয়া হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কমবে।
ফিটনেসবিহীন যান ও চালকের লাইসেন্স না থাকা এবং অবৈধ যানবাহন চলাচলের বিষয়ে সড়কসচিব বলেন, এর জন্য ৬৪ জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে। আর সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছুদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে লাভ হবে না। প্রয়োজন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কাজ করা। সেই চেষ্টা নেই।
দুর্ঘটনার জন্য এখন গতি একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকালও গতির নীতিমালা তৈরির জন্য বৈঠক হয়েছে। শহর, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক—সব স্থানেই গতি বেঁধে দেওয়া হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কমবে।সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী
সড়কে কত মৃত্যু
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের দুই ধরনের পরিসংখ্যান রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি। দুই হিসাবই বলছে, সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে।
সরকারি হিসাব দেয় বিআরটিএ। তাদের হিসাবে ২০২৩ সালে সড়কে ৫ হাজার ২৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৭ হাজার ৪৯৫ জন। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০২৩ সালে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জনের। আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন।
বিআরটিএর হিসাবে, এবারের ঈদযাত্রায় (৪-১৮ এপ্রিল) ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। অবশ্য রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ঈদযাত্রায় (৪-২০ এপ্রিল) মৃত্যু হয়েছে ৩৬৭ জনের। গত বছরের ঈদযাত্রায় মারা যান ২৮৫ জন।
বিআরটিএর তথ্যমতে, বৈধ, অবৈধ, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক মিলে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে ৫০ ধরনের বেশি যান চলাচল করে। ২০২৩ সালে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে অন্তত ৪৭ ধরনের বাহনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিশ্লেষণে এসেছে, গত বছর প্রায় ২৬ শতাংশ দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা ছিল। ট্রাকের ক্ষেত্রে হার প্রায় ১৭ শতাংশ, বাস ১৬ শতাংশ, অটোরিকশা ৭ শতাংশ এবং পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যানের সংশ্লিষ্টতা প্রায় ৮ শতাংশ।
শ্রম আইন অনুযায়ী, একজন চালক একটানা সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা, সারা দিনে আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারবেন। চালকদের কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবহনমালিকদের। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। ফলে ক্লান্তি নিয়ে এবং ঘুম ঘুম চোখে যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন চালকেরা।
কারণ জানা, ব্যবস্থা নেই
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ কী কী, তা বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। সে অনুযায়ী সরকারও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনাগত উদ্যোগের বদলে অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রকল্প নিতে আগ্রহ বেশি থাকে।
যেমন ফিটনেসবিহীন, লক্কড়ঝক্কড় যান চলাচল বন্ধ এবং যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো বন্ধে প্রয়োজন সমন্বিত ও নিয়মিত অভিযান। বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে সে কাজটি করা হচ্ছে না। রাজধানীতে সবার চোখের সামনে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। চালকেরও যথাযথ লাইসেন্স থাকছে না। ১৯ এপ্রিল রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া একটি বাস একজন প্রকৌশলীকে চাপা দিয়ে নিপরাত্তাপ্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। পরে র্যাব চালককে গ্রেপ্তার করে জানায়, তাঁর ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।
শ্রম আইন অনুযায়ী, একজন চালক একটানা সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা, সারা দিনে আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারবেন। চালকদের কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবহনমালিকদের। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। ফলে ক্লান্তি নিয়ে এবং ঘুম ঘুম চোখে যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন চালকেরা।
২০১৮ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চালকদের কর্মঘণ্টা মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশনা দেন। এরপর সড়ক বিভাগ চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করে, যার কাজ এখনো চলছে। কিন্তু মালিকেরা যাতে চালকদের বিশ্রাম দেন, সেটি নিশ্চিত করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দেশে ভারী যানবাহনের পেশাদার চালক আছেন দুই লাখের কিছু বেশি। অথচ দেশে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি, ট্যাংকারসহ ভারী যানবাহনের নিবন্ধন রয়েছে তিন লাখের মতো। ফলে ভারী যানবাহন চালানোর মতো দক্ষ চালকের ঘাটতি আছে। পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, কর্মঘণ্টা মানলে একটি ট্রাক বা বাসে তিনজন চালক দরকার। সংকটের কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক ও তাঁদের সহযোগীরা (হেলপার)।
‘বাধা নেতারা’
সড়ক নিরাপদ করার ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল বা জোটের নেতারা। যেমন সারা দেশে পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এর সভাপতি জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং মহাসচিব ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দোষারোপ করে দুর্ঘটনা কমবে না। বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমরা সহযোগিতা করব।’ তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে ২০১৯ সালে শাজাহান খানের নেতৃত্বে ১১১ দফা সুপারিশ তৈরি করা হয়েছিল। সেটি নিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
শাজাহান খান দেশের পরিবহনশ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
প্রভাবশালী মালিক ও শ্রমিকনেতারা বিআরটিএসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিনির্ধারণী নানা কমিটিতে রয়েছেন। অভিযোগ আছে, সড়ক থেকে লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন তুলে দেওয়া, পুরোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা, সড়ক আইনের কঠোর প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় কোনো উদ্যোগের নিলে নেতারা বাধা হয়ে দাঁড়ান।
যেমন ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শাস্তির কঠোর ধারা যুক্ত করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করে সরকার। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে তা কার্যকর করা এক বছর আটকে রাখেন। কার্যকর করার পর আবার ধর্মঘট ডেকে সড়ক অচল করে দেওয়া হয়।
পরে মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বৈঠকে চালকের লাইসেন্স ও যানের ফিটনেস সংক্রান্ত কিছু কিছু ধারা প্রয়োগ সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এখন সড়ক আইনটির বিভিন্ন ধারার শাস্তি কমানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে নছিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। আর বাস-ট্রাক এবং শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে সড়ক নিরাপদ করার অনেক উদ্যোগ-সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায় না।
রাস্তায়ও ত্রুটি
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, দেশের সড়ক দুর্ঘটনার ৪৩ শতাংশই জাতীয় মহাসড়কে ঘটে। এই সড়কের মোট আয়তন প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। সড়কের উন্নয়নকাজ হয়েছে। তবু দেখা যায়, কোথাও কোথাও মহাসড়কগুলো উঁচু-নিচু (রাটিং) হয়ে গেছে, কোথাও খানাখন্দে ভরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা যানবাহন, চালক কিংবা পারিপার্শ্বিক অন্যান্য কারণেও ঘটতে পারে। তবে মহাসড়কে ঘন ঘন বাঁক, খানাখন্দ, নির্মাণে ত্রুটি এবং যথাযথ সাইন-সংকেত না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অথচ সড়কে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয় উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে। যে মেরামত করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে তা বেশি দিন টেকে না। অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণকাজ হয় নিম্নমানের।
ফিটনেসবিহীন যান, লাইসেন্সবিহীন চালক, সড়কে খানাখন্দ, ক্লান্তি নিয়ে গাড়ি চালানো, অবৈধ যানবাহন—এসব কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে, তার মাশুল দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। কেউ স্বজন হারানোর শোক কাটাতে পারেন না, কেউ পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যকে হারিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন।
যেমন ফরিদপুরের দুর্ঘটনাটিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ‘লিফটম্যান’ হিসেবে চাকরিরত রাকিব হোসেন, তাঁর মা, দুই সন্তান ও স্ত্রী নিহত হন। তাঁদের ১২ সদস্যের যৌথ পরিবারটি পাঁচ স্বজন হারিয়ে শুধু শোকগ্রস্তই নয়, আর্থিক সংকটেও পড়েছে।
রাকিবের ভাই মো. ফরিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এ যৌথ পরিবার মূলত চলত আমার ও রাকিবের বেতনে। কিন্তু রাকিব চলে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছি। জানি না আগামী দিনগুলি কীভাবে কাটবে।’