জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আজ রোববারও প্রতিবাদী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আজ সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ, মশালমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এবং ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা অবন্তিকাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
রাত আটটার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’–এর ব্যানারে অবন্তিকার মৃত্যর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবিতে মশালমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র তৌফিকুল ইসলাম ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্ত সাপেক্ষে জবাবদিহির আওতায় আনা, পূর্বের ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত, প্রতিটি বিভাগে নিপীড়নবিরোধী সেলের অভিযোগ বাক্স স্থাপন, কাউন্সেলিংয়ের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং এসব দাবি আগামী সাত দিনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সভাপতি নাঈম রাজ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে প্রশাসন তৎপর হয়েছে। আমরা দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা দেখতে চাই না।’
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী নেহেরু রঞ্জন সরকার বলেন, ‘একজন মানুষ তো শুধু শুধু আত্মহনন করতে পারে না। সে (অবন্তিকা) কেন মারা গেছে, তা-ও ফেসবুকে জানিয়ে গেছে। আমরা অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উপযুক্ত বিচার চাই।’
একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে অবন্তিকা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করেন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খুশি রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে একজন শিক্ষার্থী যেভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার এবং বিচারহীনতার কারণে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন, তা-ই তুলে ধরা হয়েছে পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
নাট্যকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, ‘এখন আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। অবন্তিকার পরিবার যেন সঠিক বিচার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া
এর আগে দুপুরে অবন্তিকার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে উপাচার্য সাদেকা হালিম, কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর চৌধুরীসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।